নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশ সফরে আসছেন।‘এন্ড ওয়ার্ল্ড পোভার্টি ডে’ উপলক্ষে দুই দিনের এ সফরে আগামীকাল রোববার ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি।শনিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ১৭ অক্টোবর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘গণবক্তৃতা’ দেবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন।মেহরীন এ মাহবুব জানান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্য অর্জন শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, অনুকরণীয় হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বেও। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পরও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র অবলম্বন নয়, স্বল্প আয় নিয়েও অনেক অর্জন সম্ভব। এই সাফল্য দেখতেই বাংলাদেশ সফরে আসার সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
সংস্থাটির ঢাকা অফিস জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম মূলত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করেই ঢাকা আসছেন।বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর এন্ড ওয়ার্ল্ড পোভার্টি ডে পালন করে থাকে। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য দেখিয়েছে এমন একটি দেশকে প্রতিবছর ‘শোকেস’ বিবেচনা করা হয়। ওই দেশে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান করে থাকে বিশ্বব্যাংক। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবার বাংলাদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে। গত বছর আফ্রিকার দেশ ঘানায় এ অনুষ্ঠানটি হয়। সেখানেও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম গণবক্তৃতা দেন।
এদিকে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে গণবক্তৃতায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন মাইকেল রুডও আসতে পারেন।গত মাসে জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে আসার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তখন বলা হয়েছিল তিন দিনের সফরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তা দুই দিনের সফর হিসেবেই চূড়ান্ত হয়।দুই দিনের সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জিম ইয়ং কিম। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের চারজন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছেন। সর্বশেষ রবার্ট জোয়েলিক ২০০৭ সালে বাংলাদেশে আসেন। এ ছাড়া রবার্ট ম্যাকনামারা, পল উলফোভিৎস ও জেমস ডি উলফেনসন বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।বর্তমান সরকারের আগের আমলে ২০১১ ও ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। পদ্মা সেতু নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চললেও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় টান পড়েনি। প্রতিবছরই বিশ্বব্যাংকের সহায়তা বেড়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ : স্বাধীনতার পর দারিদ্র্য বিমোচনে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৮ শতাংশ। পরে জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে তা ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এ সময়ের আগেই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জন করে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০০৫ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী সে বছর পর্যন্ত দারিদ্র্য হার নেমে আসে ৪০ শতাংশে। পরে ২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে তা সাড়ে ৩১ শতাংশে নামে।