বাংলাদেশের বহু প্রতিক্ষিত তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে এবার দিল্লির উপর ঢাকা প্রবল চাপ সৃষ্টি করবে। ভারতের গোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে বাংলাদেশ এ চাপ সৃষ্টি করছে বলে খবর দিয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে এর গুরুত্বকে তুলে ধরতে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা জোরদার লবিং করতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী, বিশেষ করে মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ এ নিয়ে বেশি তৎপর। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে নরেন্দ্র মোদির ভাবনাকে যদি শেখ হাসিনা শতকরা একশো ভাগ সমর্থন করেন, তবে ভারত সরকারেরও উচিত তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করা।
আনন্দবাজার জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে যে আপত্তি করছেন, সে সম্পর্কে ঢাকা ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশ সরকার এটাও জানে যে এখনও মমতা তাঁর অবস্থানে কোনও বদল করেননি। তবে মনমোহন সিংহের জমানায় বাংলাদেশ যে ভাবে আগ বাড়িয়ে ঢাকা-দিল্লির অক্ষের পাশাপাশি ঢাকা-কলকাতা অক্ষ গড়ে তুলতে তৎপর হয়েছিল, এ বার কিন্তু তারা সে পথে এগোচ্ছে না। সে সময়ে বাংলাদেশের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি মমতার সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ এ বার পুরো ব্যাপারটা নরেন্দ্র মোদির মাধ্যমেই করতে চাইছে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতাকে রাজি করানোটা ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’- এই যুক্তিতে দায়িত্ব মোদির উপরেই ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা। নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের মতে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৬ অক্টোবরের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি তিস্তার ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তাই দিতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগগুলি দ্রুত মেটাতে চান মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সচিব ভাস্কর খুলবেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আনন্দবাজার লিখেছে, তিস্তা নিয়ে সিকিমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে বিবাদ চলছে, তা-ও মেটানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্র। ক’দিন আগেই সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং দিল্লি এসেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, তিস্তা চুক্তি সমর্থন করতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সিকিমের কিছু অভিযোগ রয়েছে। জটিলতা দূর করতে কেন্দ্র চামলিং ও মমতা দু’জনের সঙ্গেই আলাদা ভাবে আলোচনা চাইছে। চামলিং দিল্লি আসছেন ২৩ অক্টোবর। থাকবেন ২৭ তারিখ পর্যন্ত। দিল্লিতে বসে তিনি তিস্তা এবং রাজ্যের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা মেটাতে চাইবেন। ২০০৩ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। গুয়াহাটি থেকে কলকাতা রওনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে বলে দেওয়া হয়, এ রকম কোনও বৈঠকের কর্মসূচি বুদ্ধবাবু জানেন না। ক্ষুব্ধ চামলিং বাগডোগরা হয়ে সিকিম চলে যান। কিন্তু ২০১১ সালে সিকিমের ভূমিকম্পের পরে মমতা যে ভাবে হঠাৎই সে রাজ্যে পৌঁছে যান এবং চামলিং-এর সঙ্গে দেখা করেন, তাতে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী অভিভূত হন। চামলিং-এর পরিকল্পনা হল, ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ কলকাতা গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করা।
পত্রিকাটির জানায়, হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি মমতার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করবেন। পররাষ্ট্র সচিব ও অন্য কূটনীতিকদের পাশাপাশি মমতার সঙ্গে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিস্তার প্লাবনে যাতে দার্জিলিঙে ধস না নামে, সে জন্য নদীর ধারে পাড় ভেঙে দেওয়া এবং ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা এনএইচপিসি–র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম দু’রাজ্যেরই বৈঠক করানো-এ সবই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে।
মমতা তিস্তা নিয়ে অবস্থান বদলাননি। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে কিছু ত্যাগ স্বীকার করেও তিস্তা চুক্তি করতে আগ্রহী মোদি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগেই নরেন্দ্র মোদি তিস্তা নিয়ে একটি অন্তর্বর্তিকালীন চুক্তি করতে উদ্যোগী।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন