২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং, বৃহস্পতিবার ৭ই আশ্বিন, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


বন্যায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত


Amaderbrahmanbaria.com : - ২০.০৯.২০১৬

নিউজ ডেস্ক: এবারের বন্যায় দেশের ৪০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর ফসলের ক্ষতি হয়েছে পৌনে দুই লাখ একর জমির। দেশের ২০ জেলার ৯৫ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ১২ হাজারের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যাও ৯ লাধিক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বন্যা-পরবর্তী সর্বশেষ ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) হিসাবে বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী ও বগুড়া, উত্তর-পূর্বের জেলা জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও সিলেট, মধ্য অঞ্চলে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর। এসব জেলার আমন, রোপা আমনের বীজতলা, আউশ ধান, শাক-সবজির তে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় ১৬ জেলায় আমন বীজতলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলসহ প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং এক লাখ ৫৮ হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এনডিআরসিসি বন্যাদুর্গত ২০ জেলা থেকে ক্ষয়তির এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। জেলা প্রশাসক, জেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (ডিআরো) মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ দিকে আমন রোপণের ভরা মওসুমে এবারের বন্যা কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন টাঙ্গাইলের কৃষকেরা। জেলার ১০টি উপজেলার ৮৪টি ইউনিয়ন ও ছয়টি পৌরসভার মোট ৬৫ হাজার ৫২৯ একর জমির ফসল আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এবার বন্যার কারণে আউশ ও আমন ধান উৎপাদনের ল্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। বন্যার পানি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেমে গেছে। এসব এলাকায় দ্রুত কৃষি পুনর্বাসনের কাজ জরুরি হয়ে পড়েছে। বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে সরকারকে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষিঋণ মওকুফের কথাও সরকারকে গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসির সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ২০টি জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, সুনামগঞ্জ ও রাজশাহী। এসব জেলার ৯৫ উপজেলা, ৫২৯ ইউনিয়ন, ১৩টি পৌরসভায় মোট তিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৩৫৮টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ লাখ ১২ হাজার ১৫০টি পরিবার। এসব পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা সম্পূর্ণ ৯ হাজার ৯৭৫ জন। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ ১৯ হাজার ১১৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা সম্পূর্ণ ৭ হাজার ৯৯২টি, আংশিক ৯ লাখ দুই হাজার ৮৭৮টি। তিগ্রস্ত ফসলাদি এক লাখ ৭৫ হাজার ৩৭ একর। তিগ্রস্ত শিা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ৯৬টি, আংশিক দুই হাজার ২১৭টি। তিগ্রস্ত রাস্তা পাকা সম্পূর্ণ ৩০ কিলোমিটার, আংশিক ৩০৫ কিলোমিটার এবং কাঁচা সম্পূর্ণ ৫০৪ কিলোমিটার ও আংশিক দু’হাজার ৬১৫ কিলোমিটার। তিগ্রস্ত ব্রিজ/কালভার্ট ৪৮টি এবং তিগ্রস্ত বাঁধ ১২০ কিলোমিটার। আর ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার ১৪৫জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এ ছাড়া এবারের বন্যায় সরকারি হিসাবে মৃত লোকের সংখ্যা ৭৬ জন। মৃত গবাদিপশু ১৭টি।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুর জেলার এক লাখ ৭৮ হাজার ৩৯৩টি পরিবার, কুড়িগ্রাম জেলার এক লাখ ৭৬ হাজার ৫২১টি পরিবার, টাঙ্গাইল জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৯টি পরিবার এবং সিরাজগঞ্জের এক লাখ ২৭ হাজার ৫৭৭টি পরিবার। আর সবচেয়ে কম তি হয়েছে রাজশাহী জেলায় ১৫০টি পরিবার। আর লোকসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জামালপুর জেলায় ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫১ জন মানুষ তিগ্রস্ত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা। এ জেলায় ৭ লাখ ২২ হাজার ২৩৯ জন। সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮১ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৩ জন মানুষ তিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রাজশাহী জেলার ৭৫০ জন আর চাঁদপুরে ৯২০ জন।

এ ছাড়া নীলফামারীতে ২৭ হাজার ৭৫০, লালমনিরহাটে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩০০, রংপুরে ৩৪ হাজার ৮৩৬, গাইবান্ধায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৫, বগুড়ায় এক লাখ ২১ হাজার, কুষ্টিয়ায় ১৪ হাজার ৪২৫, রাজবাড়ীতে এক লাখ ২২ হাজার ২৮০, ফরিদপুরে ৯৭ হাজার ৭৩০, মাদারীপুরে ৪৬ হাজার ৩৬০, শরীয়তপুরে ৪৫ হাজার ৪৭৫, মানিকগঞ্জে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮০, ঢাকায় ২৮ হাজার ৫৯০, মুন্সীগঞ্জে ২৮ হাজার ৭৭৫ ও সুনামগঞ্জে এক লাখ ৩ হাজার ৬০০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিগ্রস্ত বাড়িঘরের মধ্যে নীলফামারীতে ৫ হাজার ৯১৩, লালমনিরহাটে ৫০ হাজার ৬৫০, কুড়িগ্রামে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫২১, রংপুরে ৬ হাজার ৯৭৬, গাইবান্ধায় ৫৫ হাজার ২৬১, বগুড়ায় ২৪ হাজার ২০০, সিরাজগঞ্জে এক লাখ ৩২ হাজার ৯০৭, জামালপুরে এক লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৭, টাঙ্গাইলে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৯, কুষ্টিয়া ২ হাজার ৮৮৫, রাজবাড়ীতে ২৪ হাজার ৪৫৬, ফরিদপুরে ১৯ হাজার ৪৫৬, শরীয়তপুরে ৯ হাজার ৯৫, মানিকগঞ্জে ৪৮ হাজার ৭০৬, ঢাকায় ৫ হাজার ৭১৮, মুন্সীগঞ্জে ৯ হাজার ৫৬৫, চাঁদপুরে ১৮৪, সুনামগেঞ্জে ২০ হাজার ৭২০ ও রাজশাহীতে ১৫০টি রয়েছে। আর বন্যায় কুড়িগ্রামে ৭, রংপুরে ৮, গাইবান্ধায় ৯, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৩ জন করে, জামালপুরে ৩০, রাজবাড়ীতে ৬, ফরিদপুরে ও ঢাকায় ২ জন করে, মানিকগঞ্জে ৫ ও সুনামগঞ্জে একজন মারা গেছেন।

এ দিকে ধারকর্জ করে আবাদ করা ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। ২০১৪ সালের বন্যায়ও কৃষকের ব্যাপক তির মুখে পড়তে হয়েছে। বন্যায় ধানের পাশাপাশি সবজি তেও তলিয়ে যাওয়ায় সবজির দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। পুকুর ও মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় মাছচাষিরাও সর্বস্ব হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বন্যায় আমাদের য়তি হয় এটি সত্য। আবার বন্যায় কৃষিজমিতে ব্যাপক পলি এসে জমে। এতে আমাদের উপকারও হয়। এবারের বন্যায় কৃষকদের তি পুষিয়ে আনতে সরকার তাদের মধ্যে ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষিমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অতি বৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের অধিক তিগ্রস্ত ১৬ জেলায় পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ১৭ হাজার ২১১ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৫৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকার আমন ধানের চারা ও বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ৬৪ জেলায় মাসকলাই, গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বোরোধান, মুগ, তিল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৪ লাখ এক হাজার ৩০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৮০০ টাকার ধানের চারা, বীজ ও সার দেয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, কমপে সাড়ে পাঁচ লাখ কৃষক বন্যায় তিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার পানি কমার পর এখন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ধানগাছের সাথে লেগে থাকা কাদা সরে যাচ্ছে। আবার অনেক এলাকায় বন্যার পানির সাথে আসা পলি পড়ায় ধানের জন্য তা আশীর্বাদও হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার পরামর্শক কৃষিবিদ ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, বন্যার তি পুষিয়ে নিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কৃষকদের নাজিরশাইল, বিনাশাইল, লতিশাইল, বিআর ২২ এবং অন্যান্য স্থানীয় জাতের চারা দ্রুত রোপণ করতে হবে। বন্যার পানি কমলে শীতকালীন সবজি, তেল ও ডাল জাতীয় ফসলের চাষবাসের প্রস্তুতিও নিতে হবে কৃষককে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল হাশিম জানান, জেলায় আড়াই থেকে তিন শ’ কোটি টাকার ফসলের তি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারের বন্যায় জামালপুর জেলা সদরসহ বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ীতে বানের পানিতে ভেসে গেছে ৬ হাজার ৪৫২টি পুকুর ও ঘেরের প্রায় এক হাজার ৬৯০ টন মাছ। মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, এ খাতে তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৮ কোটি টাকা। লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলায় তির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা। গাইবান্ধা জেলার তির পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামে বন্যায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা মূল্যের রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে।নয়াদিগন্ত।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদক : বিশ্বজিত পাল বাবু
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close