ছয় ৬ বছর ধরে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির বোঝা টানছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরের পর বছর রাষ্ট্রয়াত্ত ছয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির বোঝা টানতে হচ্ছে সরকারকে। চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরও এ ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রতি অর্থবছরই বাজেটে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আর বাজেটে এই ঘাটতি পূরণে অর্থ বরাদ্দ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে যাচ্ছে।
সূত্র জানান, মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো ব্যাংককে কত দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে প্রতি অর্থবছরই অর্থ ছাড় করা হয়। কিন্তু তারপরও রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমছেই না। বরং অনিয়ম, কেলেঙ্কারির জের ধরে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে।
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন অনুসারে টাকা ছাড় করার ক্ষমতা চাইছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর এভাবেই মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের বরাদ্দ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে ‘ব্যাংক মূলধন পুনঃগঠনে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি পৃথক খাত ও কোড সৃষ্টির জন্য অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ওই নির্দিষ্ট কোড নম্বরের আওতায় প্রতি অর্থবছর ৫ হাজার কোটি টাকা হিসেবে বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র জানান, কিছুদিন আগেও সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বাকেবি) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের প্রেক্ষিতে অর্থবিভাগ দুই ধাপে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড় করে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শুধু বেসিক ব্যাংককেই ১২০০ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থবিভাগ। তারপরও সরকারি ছয় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৯ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানান, ব্যাংকগুলো তাই আবারো নিজেদের সার্বিক করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরে টাকা চেয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলধন ঘাটতি পূরণ না হলে ব্যাংকগুলোর সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে আবারো অর্থ বিভাগের কাছে হাত পাততে হবে। তবে এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অর্থবিভাগের কাছে প্রয়োজন অনুসারে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা চেয়েছে (এ কাজটি বর্তমানে অর্থ বিভাগ করে থাকে)।
সূত্র জানান, মূলধন ঘাটতি পূরণে আগামী দুই অর্থবছরের জন্য অর্থ বিভাগকে এ নিয়ে একটি রূপরেখা দিয়েছে ব্যাংকিং বিভাগ। রূপরেখা অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংককে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৮৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। বেসিক ব্যাংককে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা দিতে হবে।
একইভাবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা দিতে হবে। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং করপোরেশনের অনুকূলে (বিএইচবিএফসি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০০ কোটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা ছাড় করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংককে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০০ কোটি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ছাড় করার কথা বলা হয়েছে।