g দেশে দেড় লক্ষাধিক নারী মাদকাসক্ত | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ২৯শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১৪ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

দেশে দেড় লক্ষাধিক নারী মাদকাসক্ত

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬

---

113990_1523ইডেন কলেজের এক ছাত্রী। থাকতো কলেজের হোস্টেলেই। বাবা পুরান ঢাকার একজন বড় ব্যবসায়ী। বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। মেয়ের সুবিধার জন্যই তাকে হোস্টেলে থাকতে দিয়েছিলেন তিনি। লেখাপড়া করে মেয়ে একদিন সরকারি বড় কর্মকর্তা হবে- এ রকম আশা নিয়েই টাকা ব্যয় করতেন ব্যবসায়ী পিতা। কিন্তু বাবার স্বপ্নডানা মেলার আগেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। বন্ধুদের আড্ডায় মিশে মাদকাসক্ত হযে যায় মেয়েটি। অনার্স তৃতীয় বর্ষের এ ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার এক ছেলে সহপাঠী ছিল। ওই সহপাঠী ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সুবাধে প্রায়ই বিকালে দেখা হতো তার সঙ্গে। সময় পেলেই ওই বন্ধুর সঙ্গে অড্ডা দিত সে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও টিএসসিতে বেশি সময় কাটাতো। সেখানে আড্ডা দিতে গিয়ে পরিচয় হয় আরও কয়েকজনের সঙ্গে। সবার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পোশাকেও পরিবর্তন আসে মেয়েটির। ওই আড্ডায় ছেলেমেয়ে সবাই ধূমপান করতো। মেয়েটিও শখে শখে ধূমপান করতো। একপর্যায়ে পুরো ধূমপায়ী হয়ে যায় সে। হঠাৎ সিগারেটে টান দিতে গিয়ে অন্য কিছু অনুভব করে। কী আছে সিগারেটে জানতে চাইলে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। মজা করে।

মেয়েটি তখনই বুঝতে পারে সিগারেটের মধ্যে ছিল গাঁজা। গাঁজা দিয়েই নেশার শুরু। একপর্যায়ে কলেজের হোস্টেল ছেড়ে তিন বান্ধবী মিলে আলাদা বাসা নেয়। ওই বাসাতেই ইয়াবা সেবন করতো তারা। মাদকাসক্ত কয়েক সহপাঠীর মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রি হতো কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে। যারা সেবন করে তারা বিষয়টি জানে। শুধু এই তরুণী না। লক্ষাধিক তরুণী মাদকাসক্ত হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। দেশে ৮০ লাখেরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই) ও মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)। মানসের সভাপতি ডা. অরূপ রতন চৌধুরী জানান, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই যুব। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, খোদ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও মহিলা কলেজে অন্তত ৫০ হাজার মাদকাসক্ত তরুণী রয়েছে। সারা দেশে মাদকাসক্ত নারী রয়েছে দেড় লক্ষাধিক।

তবে এ রকম কোনো তথ্য নেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে। এমনকি মাদকাসক্তদের সংখ্যা সম্পর্কেও সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তারা। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে সরকারি কোনো জরিপ নেই। তবে তাদের কাছে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তিনি জানান, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা মাদকসেবীদের সংখ্যা ৮০ লাখ বললেও তারা মনে করেন তা ৫০ লাখের বেশি না। এর মধ্যে ৭০ ভাগ যুব। তবে তাদের কাছে সারা দেশে আড়াই হাজার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা রয়েছে বলে জানান তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শতকরা ৯৮ জন মাদকাসক্ত শুরুতে ধূমপান করতো। অর্থাৎ ধূমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে তারা। মাদকাসক্তদের মধ্যে প্রায় ৪৪ ভাগ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায় বিভিন্নভাবে। এ অংশটি মূলত বেকার। মাদকাসক্ত নারীদের বয়স ১৫ থকে ৩৫ বছরের মধ্যে। মাদক সেবনের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে মাদকদ্রব্য সেবনের প্রবণতা অধিক দেখা গেলেও সম্প্রতি মাদকব্যাধিতে আশঙ্কাজনকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে যুবরা। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী। অর্থাৎ ১৮ বছরের কম ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাদকদ্রব্য গ্রহণের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের অন্তত ৫১২টি স্পটে মাদক বিক্রি হয়। এসব স্পটে ইয়াবা, হেরোইন, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে এসব মাদক ঢুকছে। এসব মাদকের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইয়াবার। ডা. অরূপ রতন চৌধুরী জানান, ৯০-এর দশকের পর থেকে এ দেশে ইয়াবা আমদানি শুরু হয়। এতে তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে যায়। মূলত ইয়াবার মাধ্যমেই তরুণ-তরুণী বেশি আসক্ত হয়। এই আসক্তির প্রভাব পড়ছে সমাজে এবং পরিবারে।

এ জাতীয় আরও খবর