গোপন যে রোগের কথা কাউকে যায় না বলা: “হার্পিস”
---
সুস্থ জীবনের জন্য জেনে রাখা জরুরী এমন একটি বিষয় হলো যৌনরোগ। অনেকেই বিরক্ত হয়ে ভাববেন, আমি জেনে কী করবো? আমার তো কখনো এমন রোগ হবেইনা! বাস্তবতা কিন্তু অনেক কঠিন। আর তাই এসব রোগ সম্পর্কে জেনে রাখাটাও ভীষণ জরুরী। এ ব্যাপারে প্রিয়.কম প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন ময়মসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার লুৎফুন্নাহার নিবিড়। STD in Bangladesh's trucking industry: prevalence and risk factors নামক প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি যে যৌনরোগটি দেখা যায় তা হলো হার্পিস। হার্পিসকে যদিও যৌনরোগ বলা হয়, তবে এটি মূলত অন্তরঙ্গ শারীরিক সংস্পর্শের কারণে ছড়ায়। হার্পিস ভাইরাস মুলত দুই ধরণের, প্রথমটিকে বলা হয় অ্যাবভ বেল্ট বা বেলতের উপরে, পরেরটিকে বলা হয় বিলো বেল্ট বা বেল্টের নিচে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা যায়, অন্তরঙ্গ শারীরিক সংস্পর্শের কারণে সহবাসের সময়ে ছড়ায় বিলো বেল্ট হার্পিস বা টাইপ টু হার্পিস। ওরাল সেক্স এর কারণেও ছড়াতে পারে এটি। হার্পিস হয়েছে কী করে বোঝা যাবে? হার্পিসের লক্ষণ অনেকটাই চর্মরোগের মতো। শরীরে পক্সের মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। অনেক সময়ে জ্বরের কারণে আমাদের ঠোঁটের পাশে যে ঘা হয়, এক ধরণের হার্পিসের কারণেও তেমন হার্পিস হতে পারে। তবে বিলো বেল্ট হার্পিসের ক্ষেত্রে এমন নাম হওয়ার কারন হলো, শরীরের নিম্নাংশে অর্থাৎ যৌনাঙ্গে ও তার আশেপাশে দেখা দিতে পারে এ ধরণের ফুসকুড়ি, র্যা শ এবং দেখা দিতে পারে ঘায়ের মতো ক্ষত। শুধু তাই নয়, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে ছড়ানো হার্পিসের লক্ষণ হতে পারে মুখে এ ধরণের ঘায়ের উপস্থিতি। এ ধরণের ঘায়ের ফলে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। ফলে চিকিৎসা করাটা জরুরী। অনেক সময়ে একজন মানুষের শরীরে হার্পিস থাকলেও তার কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। হার্পিসের ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্তরঙ্গ সংস্পর্শের ফলে ত্বকের মাধ্যমে এটি আমাদের শরীরে আসে এবং নার্ভের মধ্য দিয়ে ছড়ায়। এখানে ভাইরাসটি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যদি ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে যায় তখন যেসব লক্ষণের কথা বলা হয়েছে সেগুলো দেখা দেয়, সাথে থাকতে পারে জ্বরের মতো উপসর্গ। হার্পিস হয়েছে এটা জানতে পারার পর লজ্জায় অনেকে কাউকে জানাতে চান না। লুকিয়ে রাখতে চান ব্যাপারটাকে। কিন্তু এটা মোটেই লুকিয়ে রাখার কোনো বিষয় নয়। হার্পিস হয়েছে এমন সন্দেহ হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, আপনার যদি ধারণা হয় আপনার পরিবারের কাউ বা বন্ধুবান্ধবের কেউ এই রোগে আক্রান্ত, তবে তাদেরকে এ ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে যেতে বলুন। এতে হয়তো তারা প্রথমে রেগে যাবে, কিন্তু ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানোতে তো ক্ষতি নেই, তাই না? কারণ চিকিৎসা না করে থাকলে এটি স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি করে ফেলতে পারে। আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে যান যে আপনার হার্পিস হয়েছে, তখন ডাক্তারের থেকে ভালো করে জেনে নিতে হবে সাবধানতাগুলো। আপনি বিবাহিত হন বা অবিবাহিত, এই রোগ যখন আপনার শরীরে আছে তখন আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে অন্তরঙ্গ শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, কারণ যতো সাবধানই থাকুন না কেন, তিনিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি কনডম ব্যবহার করলেও লাভ নেই, কারণ ত্বকের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।