g রেসিপিঃ পুডিং (Pudding) | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বুধবার, ৩০শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ১৫ই ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রেসিপিঃ পুডিং (Pudding)

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ২৬, ২০১৪

---

P1240901

সাহাদাৎ উদরাজি: সারা বিশ্বে ডিম ও দুধের মিশ্রনে যে খাবারটা সবচেয়ে জনপ্রিয় তা হচ্ছে পুডিং (Pudding)। আমি যত দেশে গিয়েছি এই খাবারের দেখা পেয়েছি নানান হোটেলে এবং ঘরে ঘরেই। পুডিং বানানোর প্রসেস গুলো একটু জটিল হলেও আমি মনে করি এটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়, এর চেয়ে নানান পদের তরকারী রান্না কঠিন! হা হা হা… কিন্তু কথা থেকে যায় তবুও কেন সবাই পুডিং বানাতে পারে না! এর প্রধান কারন হচ্ছে মিশ্রন। মিশ্রনে সবাই একটু ভুলভাল করে বলেই সঠিক ভাবে পুড়িং বানাতে পারে না। কখনো নরম, কখনো শক্ত ইত্যাদি নানা সমস্যায় পড়ে যান অনেকেই।

আমি নেটে পুডিং বানানোর অনেক রেসিপি দেখেছি, প্রায় সব রেসিপি দেখে একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি যে, বলে দিলেই যে কেহ বানাতে পারবে তা নয়, এই পুডিং বানানো একটা অভিজ্ঞতার বিষয়। যিনি জানেন তার কাছ থেকে একবার দেখে নিলেই বানানো সহজ হয়ে উঠবে। তবে আগেই বলে নেই, আপনি যখন প্রথম বানাবেন সেটা খারাপ হতে পারে এবং ২য় বার যখন বানাবেন সেটা অবশ্যই ভাল হবে।

চলুন দেখে নেই, পুরাটাই আমার নিজের হাতে বানানো, শুধু ক্যারামেলের অংশটা আপনাদের ব্যাটারী ভাবী হেল্প করে দিয়েছেন। তিনি ঘরে প্রায়ই পুডিং বানান আমাদের বড় ছেলের জন্য কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে আমার আগ্রহ তেমন একটা নেই বলে দেখা হয়ে উঠে নাই। আজ উনাকে হেল্প করতে বললে তিনি কিছুটা অনাগ্রহ দেখান, তাই আমি নিজেই কাজে লেগে যাই। যাবার আগে নেটে কয়েকটা পুডিং রেসিপি দেখে নেই।

এদিকে পুডিং রেসিপি নিয়ে এ যাবত আমি বেশ কয়েক বার আমার রেসিপি প্রিয় বন্ধুদের অনুরোধ পেয়েছি, ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গিয়েছি। আজ মেসেজে এক ছোট বোনের রিকেয়েষ্ট পেয়ে আর বসে থাকতে পারলাম না। তিনি লিখেছেন, “ভাইয়া, যদি সম্ভব হয়, একবার পুডিং এর রেসিপি দিন প্লিজ… নেট এ অনেক রেসিপি আছে পুডিং এর। কিন্তু, আপনি করে না দেখালে পারবো না। এটা আমার অনেক পছন্দের খাবার ভাইয়া… কিন্তু, করতে পারি না। সম্ভব হলে দেখাবেন প্লিজ… বার বার বিরক্ত করছি… দুঃখিত ভাইয়া“। আপনারাই বলুন, এর পর কি আর কোন বাঁধা মানতে পারি! 

চলুন দেখে নেই। শুধু ধাপ গুলো মনে রাখলেই হল। সহজ কাজ।

উপকরণঃ (হাফ কেজির মত বানাতে যা লাগবে)
– দুধ, হাফ লিটার (যা জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে, পরে ঠান্ডা করে নিতে হবে)
– ডিম, চারটে
– চিনি, ৫/৭ টেবিল চামচ (চিনি বেশী পছন্দ করলে আরো দিতে পারেন)
– হাফ টেবিল চামচ ঘি বা মাখন/বাটার (গলিয়ে)

ধাপ সমূহঃ এই ধাপ গুলো মনে রাখলেই হল।
১। দুধ প্রসেস
২। ডিম চিনি ও ঘি’র মিশ্রন
৩। ক্যারামেল দিয়ে পুডিং রান্না বাটি প্রসেস
৪। দুধ ও ডিম (চিনি+ঘি) মিশ্রন ফাইন্যাল প্রসেস এবং ক্যারামেলের বাটিতে রাখা
৫। রান্না ও টেষ্ট (সঠিক হল কি না)
৬। পরিবেশনা (ঠান্ডা চাইলে ফ্রীজে রাখতে হবে)

প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
১। দুধ প্রসেস

হাফ লিটার ফুল ক্রিম দুধ নিন। বাজারে পাওয়া ইউএসটি মিল্ক নিলেই ভাল বা খাঁটি গরুর দুধ নিতে পারেন, পানি মিশানো নয়।


জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে ফেলুন, মোটা মুটি এককাপ গাঢ় দুধ হলে চলবে। দুধ চুলায় দিয়ে কোথায় যাবেন না, মনে রাখবেন দুধ আগুনে উপছে পড়ে কাজেই কাছে থাকুন এবং নাড়াতে থাকুন। দুধ গাঢ় হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। (কিছুতেই গরম নয়!)

২। ডিম, চিনি ও ঘি’র মিশ্রন

ডিম নিন।


ভাল করে ফাটিয়ে নিন, বিটার দিয়ে ফাটালো ভাল। শুধু মনে রাখবেন যেন, ভাল মিশ্রন হয়। এবার চিনি দিন। যারা বেশী মিষ্টি পছন্দ করেন তারা বেশি দিতে পারেন তবে আমি মনে করি চিনি কম খাওয়াই ভাল এবং টেবিল চামচে ৫/৬ চামচ দিলেই হবে। চিনি দিয়েও ভাল করে মিশিয়ে নিন।


এবার হাফ টেবিল চামচ ঘি বা বাটার (গলিয়ে) দিন এবং আবারো ভাল করে মিশিয়ে নিন।  (আমি বাটার বা মাখন দিয়েছি)


এই হয়ে গেলো ডিম, চিনি, ঘি এর মিশ্রন।

৩। ক্যারামেল দিয়ে পুডিং রান্না বাটি প্রসেস

পুডিং বাটিতে ক্যারামেল (চিনি) বসানোর প্রসেস দেখে নিন। যে বাটিতে পুডিং বসাবেন সেই বাটি অবশ্যই এলুমিনিয়ামের হতে হবে। (এই ধরনের বাটি যে কোন গ্রোসারীতে পাওয়া যায়, আমরা টিফিনের বাটিতে বসিয়েছিলাম) বাটিতে এক চা চামচ চিনি ছিটিয়ে দিন। বেশী নয়।


দেখুন, এভাবে এবং এবার কয়েক চামচ পানি দিন এবং চুলায় আগুনের (মাধ্যম) উপর দিন।


এই রকম অবস্থায় এসে যাবে, চিনি পানিতে গলে এমন হবে।


এবং সিরা হয়ে লাল হতে থাকবে। আগুন কমিয়ে দিন এবং নাড়িয়ে এই লাল সিরা পুরা বাটিতে বিচিয়ে লাগিয়ে দিন। কাজটা সাবধানে করতে হবে। বাটি গরম সুতারাং লুচনী দিয়ে ধরে নিন।


ব্যস, বাটিতে ক্যারামেল বসে গেল এবং চুলা থেকে সরিয়ে ঠান্ডা বাটি ঠান্ডা করে নিন।

৪। দুধ ও ডিম (চিনি+ঘি) মিশ্রন ফাইন্যাল প্রসেস এবং ক্যারামেলের বাটিতে রাখা

মিশ্রন! ঠান্ডা দুধ, ডিম এবং চিনি ঘি এর মিশ্রনে ঢালুন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন। মনে রাখবেন যদি দুধ সামান্য গরম থাকে তবে ডিমকে জমাট করে ফেলবে। কাজেই দুধ খুব ঠান্ডা করে নিয়েই মিশাতে হবে।


এই সেই ফাইন্যাল মিশ্রন। ভাল করে ফাটিয়ে মিশিয়ে নিন।


এবার এই মিশ্রন ক্যারামেলের বাটিতে ঢালুন এবং এই সাইজেই পুড়িং বের হয়ে আসবে।


ব্যস, পুডিং এর বাটি রেডী!

৫। রান্না ও টেষ্ট (ঠিক হল কি না)

এবার মুল রান্না। একটা বড় খোলা পাত্রে পানি নিন এবং তাতে এমন একটা স্ট্যান্ড বসিয়ে নিন। স্ট্যান্ড না থাকলে পানি কম দিবেন যাতে পুড়িং এর বাটি বসালে নড়বে না।


পাত্রের মাঝামাঝি পুডিং এর বাটি বসিয়ে দিন।


পুডিং এর বাটিতে একটা ঢাকনা দিন।


এবার বড় পাত্রের ঢাকনা দিন।


আগুন মাধ্যম আঁচে চলবে। মিনিট ৩০ লাগতে পারে। এখানে একটু ধৈর্য ধরতে হবে! হা হা হা, আগুন বাড়িয়ে দিলেও হয় কিন্তু তা করা উচিত হবে না। পানি ফুটে বিপদ হতে পারে তাই আস্তে আস্তে হলেই ভাল।


পানি এভাবে ফুটবে, একটু সময় নিয়ে দেখুন, চুলা ছেড়ে যাবেন না।


আগুন কমিয়ে দিলে পানি ফুটা বন্ধ হবে এবং ফুডিং এর বাটির ঢাকনা উলটে একটা টেষ্ট করে দেখুন পুডিং হল কি না। একটা চামচের পিছনের অংশ পুডিং এ প্রবেশ করান যদি দেখেন চামচ সহজেই প্রবেশ করছে এবং পুডিং এর কাই লেগে নাই, তা হলে পুডিং হয়ে গেল। আর যদি লাগে তবে আবারো ঢাকনা দিয়ে আরো কিছুক্ষন পানি গরম করুন।


হয়ে গেলে তুলে রাখুন, ঠান্ডা হতে দিন। একটা পরিবেশনের প্লেট নিন।


একটা ছুরির মাথা দিয়ে পুড়িং এর চার পাশ একটু নাড়িয়ে দিন। এটা এই জন্য করবেন যেন বাটি উলটে দিলে পুরা পুড়িং খুলে যায়।


বাটির উপরে প্লেট ধরে খুব আলতো ভাবে উলটে দিন। জোর জবর দোস্তি করার দএকার নেই। পুরোটাই খুলে পড়বে।


এই দেখুন। (আমি বাটিটা একটা বাকা বসিয়ে ছিলাম বলে মাঝে একটু নিচু হয়ে গেছে, ব্যাপার না)

৬। পরিবেশনা (ঠান্ডা চাইলে ফ্রীজে রাখতে হবে)

পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত, চাইলে গরম গরম খেয়েও মজা লুটতে পারেন, ইচ্ছা আপনার।


এই নিন ফাইন্যাল প্রোডাক্ট! ফ্রীজ থেকে বের করার পর।


ইচ্ছানুযায়ী পরিবেশন করুন।


সত্যই দারুন! আমার রান্না টেষ্টার খেয়ে জানালো, “বাবা আশা করি এবার ঈদের দিন আর একটা বানিয়ে দেবে”। আমি বললাম, তোমার মা তো তোমাকে প্রায়ই বানিয়ে খাওয়ায়। সে বলল, “তুমি চিনির পরিমান খুব ভাল দিয়েছ এবং তোমার হাতের বানানো পুড়িং এর রংটাও বেশ সুন্দর হয়েছে”!

আমি নিজেও সত্যই আনন্দিত, আমি নিজেও এই প্রথম পুডিং বানালাম এবং দেখলাম কাজটা তেমন কঠিন নয়। আমি বানানো এবং ছবি তোলার জন্য আমার কিছুটা বেশী কষ্ট হয়েছে কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কাজ করে গেলে এটা তেমন কিছুই নয়! আমি আশা করি আমার এই রেসিপি দেখলে, সবাই পুডিং বানাতে পারবেন এবং আজ থেকে প্রতি ঘরে ঘরেই পুডিং হবে!

রেসিপি প্রিয় সবাইকে শুভেচ্ছা।

* বুঝার স্বার্থে ছবি একটু বেশী যোগ করেছি, যাতে কোন কনফিউশান না থাকে।

এ জাতীয় আরও খবর