g মালয়েশিয়ায় মঙ্গলবার থেকে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ২৮শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ১৩ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় মঙ্গলবার থেকে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ১৯, ২০১৪

---

malashiyaমালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার জন্য ৫ম মেয়াদে বর্ধিত করা বিশেষ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২১ জানুয়ারি। ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে শুরু হবে বিশেষ অভিযান।

অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের আটক করতে নারী পুরুষের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টিম এ অভিযানে নামছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ায় সংবাদ মাধ্যমগুলো।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, বাজার, মহাসড়ক, হোটেল-মোটেল, রেষ্টুরেন্ট, দোকান এবং জনসাধারণের চলাচল আছে সম্ভাব্য এমন সব জায়গাতেই এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই বিশেষ টিম বিভিন্ন জায়গায় ব্লক দিয়ে শ্রমিকদের পারমিট এবং কর্মস্থলের বৈধতা আছে কিনা সেটা যাচাই করবে।

অভিবাসী আইন অমান্যকারীদের জেল-জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে জেলা পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা থেকে কর্মীদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

এই অভিযানের আওতায় আরও থাকবে নিরাপত্তাকর্মী এবং গাড়ি চালকরাও। অভিযান  চলাকালে পারমিটে (বৈধ কাগজ) বর্ণিত পেশা এবং নিজ কর্মস্থল ব্যতীত অন্য জায়গায় কর্মরত শ্রমিকদের অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এমনকি বাইরে কাজ করতে দেওয়ার অপরাধে মালিককেও জরিমানা করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

দিন দিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিল্প কারখানা বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে দেশটিতে। এজন্য আরও বিদেশি শ্রমিক নিতে চাইছে দেশটি। কিন্তু এরপরও কেনো বিদেশি শ্রমিক বিতাড়িত করা হবে এমন প্রশ্ন জাগলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়া বর্তমানে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। তাই দেশটিতে অবস্থারনত বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকদের ডাটাবেজ সফটওয়্যারে সংরক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০১১ সালের আগস্টে ৬-পি প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত ফিঙ্গারপ্রিন্ট করে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকে নাম রেজিস্ট্রেশন করলেও দালাল বা এজেন্টের পিছু ছাড়েনি, এ কারণে তারা বারবার প্রতারিত হয়ে আসছে।

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, অভিযান শুরু হওয়ার অর্থ, এই অভিবাসী শ্রমিকদের সামনে মহাবিপদ। এছাড়া, স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেওয়াও মালয়েশিয়া সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।

সরকার মনে করছে মালিকরা সস্তায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিক পাওয়ার কারণে স্থানীয়দের নাগরিকদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। সরকার এই মুহূর্তে মালয়েশিয়া থেকে অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ দেখছে না।

এদিকে সাড়াঁশি অভিযান শুরু হওয়ার আগেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অবৈধ অভিবাসীরা। গত কয়েক বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় এটিই সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত শ্রমিকরা এই অভিযান আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তবে, অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধতা দিতে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন পর জি টু জি’র মাধ্যমে সরকার হাতে গোনা কিছু কৃষি কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠালেও নিবন্ধনকৃত ১৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর ভাগ্যে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় গমনের সুযোগ হচ্ছে না।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্রক্রিয়া আশানুরূপ কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে নিবন্ধনকৃত ১৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর ডাটাবেজ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর আদেশ জারি করে।

এদিকে, গত বছরে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের জন্য তৈরি সরকারি ডাটাবেজ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার মালয়েশিয়ায় কৃষি শ্রমিক প্রেরণের উদ্দেশে সারা দেশ থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর নিবন্ধন নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও জনশক্তি রপ্তানিতে মালয়েশিয়ার জন্য তৈরি এই ডাটাবেজ থেকে কর্মী নির্বাচনের জন্য মন্ত্রণালয় দুটি আদেশ (সংযুক্তি) জারি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর বায়রা এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানিতে ‘মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সরকারি ডাটাবেজ’ থেকে কর্মী গ্রহণের বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই আদেশসমূহ  স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

২০০৮ সনের ১০ মার্চ থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ ছিল। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৎকালীন লেবার কাউন্সিলর তালাত মাহমুদ খানের একটি বির্তকিত বক্তব্যের কারণে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই সময়ে ৫৫ হাজার কলিং ভিসা বাতিল হয়ে যায়। এসব কলিং ভিসার জন্য ব্যয়কৃত কয়েক শত কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় পড়ে রয়েছে যা এখন পর্যন্ত পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সরকারের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সলে মালয়েশিয়ায় জি টু জি পদ্ধতিতে জনশক্তি রফতানি’র লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মালয়েশিয়ার তৎকালীন হিউম্যান রির্সোস মন্ত্রী দাতো সুব্রামানিয়াম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন উভয় দেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

বহু ডাকঢোল পিটিয়ে এ যাবৎ মালয়েশিয়ায় জি টু জি’র মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে গত বছরের ২৫ এপ্রিল ১শ’ ৯৮ জন এবং সম্প্রতি আরও ১শ’ ৪৭ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বঞ্চিত করে সরকার এককভাবে মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মীকে নিবন্ধনের আওতায় আনে। মালয়েশিয়ায় জি টু জি’র মাধ্যমে কর্মী বাছাইসহ বিদেশে দফায় দফায় সফরের জন্য বিদেশগামী কর্মীদের কল্যাণ তহবিলের জমাকৃত প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এনিয়ে খোদ বিএমইটিতে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। ২০১১ সনের ১৫ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮শ ৮৩জন অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী বৈধতা লাভের সুযোগ পায়। মালয়েশিয়ায় তৎকালিন ৬-পি কর্মসূচি সম্পন্ন হবার পরেও ওই দেশে লক্ষাধিক বাংলাদেশি অবৈধ থেকে যায়।

মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ শ্রমিক রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। ওই অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দিতে ২১ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সময় বেধে দিয়েছিল মালয় সরকার । নির্ধারিত সময় পার হওয়াতে এই সাঁড়াশি অভিযান শুরু করছে দেশটি অভিবাসন বিভাগ।

এই অভিযানে শুধু শ্রমিকদের বিপদই নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিপদের সংকেত দেওয়া হয়েছে মালিকদেরকেও।  মন্ত্রণালয় থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোন কোম্পানি যেন অবৈধ শ্রমিক অথবা অন্য কোম্পানির শ্রমিক ব্যবহার না করে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট কাগজের কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে যাচ্ছে ২১ জানুয়ারি। ফিঙ্গারপ্রিন্টের কাগজ দেখিয়ে অথবা প্রতারণার অজুহাতে আর গ্রেফতার এড়ানো যাবে না। কোনো মালিক অবৈধ শ্রমিক নিয়োগ দিলে স্থানীয় আইনে ১০ হাজার মালয় রিঙ্গিত সর্বোচ্চ জরিমানা গুনতে হবে। এতে কপাল পুড়বে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৩লক্ষাধিক শ্রমিকের। যারা ইতোমধ্যে স্টুডেন্ট, ট্যুরিস্ট সহ বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ায় এসে অবৈধভাবে কাজ করছেন।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মালয়েশিয়ার আইনে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য জেল, জরিমানা ও বেত্রাঘাত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে সাগর পথে আসা যেসব শ্রমিকের কোনো কাগজ-পত্র ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই সেসব শ্রমিককে বেত্রাঘাতের মতো এমন কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে যারা বৈধভাবে এসে বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়েছে তাদের জন্য এই শাস্তি প্রযোজ্য নয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রাশেদ বাদল বাংলানিউজকে জানান, দ্বিপাক্ষিক অলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে শ্রমিক বিনিময়ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ শ্রমিকদের বৈধ করে নিতে আগামী ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়।

অন্যদিকে, ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধতা দিতে আলেচনা করেন। আলোচনার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বলা হয়, এরপরও কেউ অবৈধ থেকে গেলে সে ক্ষেত্রে সরকারের আর কিছুই করার থাকবে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার এ কে এম আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যারা ৬পি কর্মসূচির আওতায় বৈধ হয়নি তাদেরকে বৈধতা দেওয়ার জন্য মালয় সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া, যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের হয়রানি না করার জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এ জাতীয় আরও খবর