পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতা আলোর মুখ দেখতে পারছে না র্যাপিড পাস কার্ড
পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতার কারণে আলোর মুখ দেখতে পারছে না ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) চালু করা র্যাপিড পাস কার্ড। প্রায় ছয় মাস আগে এটা চালু করা হয় মনগড়া ভাড়া আদায়সহ নানা মালিকপক্ষ সৃষ্ট নানা নৈরাজ্য ঠেকাতে।
র্যাপিড পাস মূলতঃ ক্রেডিট কিংবা ডেবিট কার্ডের মতন। যাত্রী বাসে ওঠার সময় কার্ডটি বাসে রাখা মেশিনের সঙ্গে স্পর্শ করলে সবুজ বাতি জ্বলবে। আবার যাত্রী কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নামার সময় আবার কার্ডটি মেশিনের সঙ্গে স্পর্শ করলে নির্ধারিত গন্তব্য অনুযায়ী কার্ড থেকে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। এই কার্ড রিচার্জের সুবিধা আছে। বাসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি কিংবা নগদ টাকা সঙ্গে না থাকলেও বাসে চড়ার মতো সুবিধা এই র্যাপিড পাস কার্ডে রয়েছে।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে আমরাও চাই গণপরিবহনে এমন কার্ডের ব্যবহার হোক। কার্ডগুলোর দাম আরও কমানো গেলে যাত্রীদের সাড়া পাওয়া যেত।
প্রথম অবস্থায় বিআরটিসির এসি বাস ও ঢাকার চাকা পরিবহনে এই কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমানে বিআরটিসির ২৫টি এসি বাস ও ঢাকার চাকা পরিবহনে স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ আছে। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি গণপরিবহনে ব্যবহার বিষয়েও কার্যক্রম চলমান।
ঢাকার চাকার নিয়মিত যাত্রী ইমরান আহমেদ সুমন বলেন, চারশ টাকা দিয়ে কার্ড ক্রয় করে গুটিকয়েক পরিবহনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। তাহলে এটা করে কী লাভ? যদি সব পরিবহনে এই কার্ড চালু করা হতো, তাহলে কার্ডের পূর্ণ সুবিধা যাত্রীরা পেতো। তাছাড়া কার্ড সংগ্রহ এবং রিচার্জের স্থানও অনেক কম এবং ভোগান্তির।
আরও : একটি আমের দাম দেড় হাজার টাকা!
নগরীর ডাচ বাংলা ব্যাংকের ছয়টি শাখা থেকে র্যাপিড পাস কার্ড কেনা ও রিচার্জের সুযোগ আছে। শাখাগুলো হলো- মতিঝিল লোকাল অফিস শাখা, মতিঝিল বৈদেশিক বিনিময় শাখা, এলিফ্যান্ট রোড শাখা, বনানী শাখা, উত্তরা শাখা ও সোনারগাঁও-জনপথ শাখা। এছাড়া নতুন বাজার, গুলশান-২, শুটিং ক্লাব ও বনানী টিকিট কাউন্টার থেকে কার্ড কেনা ও রিচার্জ করা যায়। বিআরটিসি এসি বাসের জন্য র্যাপিড পাস কার্ড পাওয়া যাবে হাউজ বিল্ডিং, বনানী, শাহবাগ ও মতিঝিলে।
একটি কাউন্টারের কর্মী এ প্রতিবেদককে জানান, সব বাসে সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি বলে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। গুটি কয়েক বাসের জন্য কার্ডটি সংগ্রহ করতে আগ্রহী নন যাত্রীরা। তাছাড়া বাস মালিক ও হেলপারদের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। কেননা, কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া প্রদান হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অর্থ নিতে পারা যাবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই ভাল উদ্যোগে তো বাস মালিকদের সহযোগিতা নেই। কারণ এর মাধ্যমে বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না। এ কারণে মালিকরা চান না, তাদের বাসে র্যাপিড পাস কার্ড ডিভাইস যুক্ত হোক।
কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির মালিকদের ভাষ্য- দৈনিক একটি গাড়ি পরিচালনায় নানা ধরণের খরচ আছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করে সেই খরচ উঠিয়ে লাভ করা সম্ভব নয়।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, স্বেচ্ছায় কেউ সার্ভিসটি চালুর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কয়েকটি পরিবহনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া আসেনি। কোনও মালিক অজুহাতও দেখাচ্ছেন। কাউকে তো আর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।