ধর্ষণের পরে যৌনাঙ্গে খেজুর কাঁটা ঢুকিয়ে হত্যা
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শ্যামপুরে এক গরুর মুখ-পা বেঁধে ধর্ষণের পরে যৌনাঙ্গে খেজুরের কাঁটা এবং ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
২২ জুন, শুক্রবার এ ঘটনায় সুজল মাইতি (২০) নামের এক যুবকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এবেলা জানায়, ২০ জুন, বুধবার রাতে শ্যামপুরে বাড়গ্রামের একটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় দুই বছর বয়সী গরুটি। ২১ জুন, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির বাসিন্দা ছায়া মণ্ডল গরুটিকে গোয়ালঘরে দেখতে না পেয়ে তার খোঁজ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মাঠের মধ্যে পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় গরুটির দেহ উদ্ধার হয়। তখনই দেখা যায় মৃত প্রাণীটির যৌনাঙ্গে এবং পায়ুদ্বারে খেজুর কাঁটা বেরিয়ে রয়েছে। বেরিয়ে এসেছে পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি। অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ছিল শরীরের ওই অংশগুলো।
গরুটির দেহে এই ধরনের আঘাত দেখেই সন্দেহ বাড়ে এলাকাবাসীর। সবারই সন্দেহ গিয়ে পড়ে সুজল মাইতি নামে স্থানীয় ওই যুবকের ওপর। কারণ মাস ছয়েক আগে এক রাতে সুজল এই গরুটিকে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন।
এ ছাড়াও এর আগে বেশ কয়েকবার গরুদের ওপর যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছিল সুজলের বিরুদ্ধে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। গ্রামবাসী তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সুজল অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও : একটি আমের দাম দেড় হাজার টাকা!
২১ জুন, বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের উপস্থিতিতে প্রাণীটির ময়নাতদন্ত করায় পুলিশ। যৌন অত্যাচারের প্রমাণ পাওয়ার পরই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সুজল মাইতিকে।
শুক্রবার অভিযুক্তকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের জেলহাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তার বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।
বিশিষ্ট মনোবিদ অধ্যাপিকা মৌসুমী মজুমদার ঘটনাটিকে একধরনের মানসিক বিকার বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের স্নেহ, মায়া, মমতা থেকে বঞ্চিত হলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে এ ধরনের পৈশাচিক প্রবৃত্তি জন্ম নেয়। এ ক্ষেত্রে যে এই জঘন্য ঘটনাটি ঘটিয়েছে, সে খুব সচেতনভাবেই বুদ্ধি খাটিয়ে তার যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য গরুটিকে সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ কোনো মহিলার প্রতি যদি সে এই আচরণ করত তাহলে সেই মহিলা প্রতিবাদ করতেন। সে ক্ষেত্রে আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিরীহ অবলা জীবকে সে তার যৌন খিদে মেটানোর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিল।’
মনোবিদের ব্যাখ্যার সঙ্গে অবশ্য সুজলের অতীত জীবনেরও মিল পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সাত বছর ধরে তার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। ফলে তিনি সুজলের দিদির বাড়ি গিয়ে থাকতেন। কৈশোরেই বেশ কিছু দুষ্কর্মের জন্য বাড়িতে একাধিকবার বকাঝকা করা হয় সুজলকে। সে সময় তিনি আত্মহত্যার হুমকিও দেন। ফলে গত কয়েক বছরের মানসিক বিকার থেকেই তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ এবং এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ মনে করছে, এই ঘটনায় কড়া শাস্তি না হলে এমন কাণ্ড আরও ঘটতে পারে।