বাজেট ঘোষণার আগেই সমালোচনায় বিএনপি নেতা
ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করার আগেই একে ‘শোষণের বাজেট’, ‘ভুয়া বাজেট’, ‘লুটপাটের বাজেট’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। তার দাবি, এই বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণেই আসবে না।
বৃহস্পতিবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন মঈন। বলেন, ‘জনগণের পকেট কেটে সরকার শোষণের বাজেট দিচ্ছে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বরাবর বাজেট নিয়ে বিরোধী দল সমালোচনায় মুখর থাকে। তবে এবার বাজেট পেশের দুই দিন আগেই বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এর সমালোচনা করেছেন। আর মঈন খান তাই করলেন।
বেলা সাড়ে ১২টার পর সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুরুতে দেশের অর্থনীতির ওপর বক্তব্য দেয়ার পর চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট দেন। জানান, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও প্রাথমিক প্রাক্কলনে এটি ৭.৬৫ শতাংশ হয়েছে।
বারের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়েও ৫৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই তথ্যটি অবশ্য আগেই জানা গেছে। তবে বাজেটের খুঁটিনাটি তখনও প্রকাশ করেননি মুহিত।
তবে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবের কয়েক ঘণ্টা আগে মঈন খান বলেন, ‘বাজেট ফুলিয়ে বড় করা হচ্ছে। আকারে বড় হলেও এর মান অত্যন্ত নিম্ন।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মন্ত্রী বলেন, ‘ভুয়া বাজেট। এতে জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না।’
ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বাজেটকে ‘মেগা প্রজেক্টের মেগা লুটপাটের বাজেট’ বলেও দাবি করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। এ সরকারের বাজেট দেয়ার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
আরও : আর্জেন্টিনার ভক্ত মাশরাফি
তিনি বলেন, আজকে বাজেট দেয়া হচ্ছে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকার। যেটা গত বছেরর চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। আমি বাজেট সম্বন্ধে এখানে বিস্তারিত বলতে চাই না। আগে বাজেট পেশ করা হোক। বাজেটের ওপরে আমরা প্রয়োজনে রিঅ্যাকশন দেব। তার চুলচেরা বিশ্লেষণ আমরা করবো।
মঈন খান বলেন, আমি সংক্ষেপে শুধু এইটুকু বলতে চাই। আজকে যে সরকার বাজেট দিচ্ছে। বাজেট দেয়ার নামে তারা জনগণের ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করছে। ১০০ কোটি টাকার প্রজেক্টকে তারা ১০০০ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট বানিয়ে সেখান থেকে লুটপাট করছে। বাজেটের আকার দিয়ে কিছু বোঝা যায় না। বাজেটের আকার বাজেটের মান সম্বন্ধে কিছু বলে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাজেটের মান অত্যন্ত নিম্ন। আপনারা দেখেছেন যে, ঢাকা শহরে যেসব বড় বড় প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে। এমনকি পদ্মা সেতু প্রজেক্ট প্রথম শুরু হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। সেই প্রজেক্ট আজ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। এই প্রজেক্ট শেষ হতে হতে বাজেট ৫০ হাজার কোটি টাকা হলেও আমরা অবাক হব না।
তিনি বলেন, এতেই প্রমাণিত হয় যে বাজেটের কোয়ালিটি কী। বাজেট ফুলে ফেপে বড় হয়েছে। এটা বাজেটের জন্য গৌরবময় কোনো বিষয় নয়। সাইজ দিয়ে কোনো বাজেটের কোয়ালিটি নির্ধারিত হয় না। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, এই বাজেট জনগণকে শোষণ করছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই বাজেট একটি ভুয়া বাজেট। এই বাজেট দিয়ে কখনো বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। আপনারা আমার সঙ্গে গ্রামে-গঞ্জে চলুন। প্রতিটি রাস্তা, হাট, বাজার, স্কুল, কলেজ তার অবস্থা আপনারা পর্যবেক্ষণ করুন। আপনারা (আওয়ামী লীগ) বলছেন আমাদের সময় বাজেটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আজকে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। আমি প্রশ্ন করব- ৪ লক্ষ হাজার কোটি টাকা কার পকেটে যাচ্ছে?
তিনি বলেন, আজকে এই সরকারের কার্যক্রমের কারণে জনগণ প্রশ্ন করতে পারে না। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তার মাধ্যমে যদি একটি জবাবদিহিমূলক সরকার আসে। সেই সময় একটি জবাবদিহিমূলক পার্লামেন্ট যদি আমরা সৃষ্টি করতে পারি সেখানে প্রশ্নগুলো তুলব। সরকারের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা করতে হবে। জনগণের পকেট কেটে যে টাকা নেয়া হচ্ছে সেই টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? এটা সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
মঈন খান জিয়াউর রহমানের সমাধিতে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নবনির্বাচিত নেতাদেরকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে কমিটি করেছি। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন,সম্প্রতি সরকার আমাদের ওপর কীভাবে নির্যাতন-নিপিড়ন শুরু করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দল পুনর্গঠন করা শুরু করেছি। ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৫টি থানার কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে।
এ সময় সদ্য ঘোষিত মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।