মধ্যপ্রাচ্য সংকটের এক বছর : উপসাগরীয় অর্থনীতির কী অবস্থা?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক বছর আগে (৫ জুন, ২০১৭) কাতারের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিসর পুরোমাত্রায় জল, স্থল ও আকাশপথে অবরোধ আরোপ করে।
তখন থেকে অর্থনীতি, ব্যাংক ব্যবস্থা ও মুদ্রা বাঁচাতে যতকিছু সম্ভব তার সবকিছুই করেছে মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী দেশ। চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির বন্ড বাড়ানো হয়েছে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। যার ফলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে অচলাবস্থা চলার পর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা কাতারের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে বেশ প্রত্যয়ী।
সরবরাহ লাইন ও অভ্যন্তরীণ পণ্য-সামগ্রী উৎপাদনসহ দেশটির ২০০ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো পরিকল্পনায় পরিবর্তন অানা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি নিয়ে এখন ব্যস্ত বিশ্বের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বোচ্চ রফতানিকারক এই দেশ।
কাতারের ওপর আরোপিত দীর্ঘদিনের এই অবরোধের ফলে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে? বৈশ্বিক ঝুঁকি পরামর্শক সংস্থা ইউরোএশিয়া গ্রুপের ‘মিনা’র প্রধান আয়হাম কামেল মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে আল-জাজিরার কাউন্টিং দ্য কস্ট প্রোগ্রামের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কাতার কীভাবে এই ধাক্কা সামলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কামেল বলেন, কাতার এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এটা মনে হচ্ছে যে, অবরোধ অথবা সংকটের অর্থনৈতিক মূল্য এখন কমে এসেছে। অভ্যন্তরীণ কিছু খাতে সরকারি হস্তক্ষেপ সফল হয়েছে। এর ফলে বেশ কিছু নিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বহুল প্রয়োজনীয় সঞ্চিত তরল অর্থ সরকারকে দিয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে আদর্শের উল্টো হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধকল সামলাতে এ কাজ করেছে।
সুতরাং আমি মনে করি, জিসিসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাতারের সংকট শুরুর এক বছর পর দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কীভাবে কাজ করতে হয় সে ব্যাপারে কাতার সক্ষমতা দেখিয়েছে।
আরও : কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ
কাতার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করলো বিষয়টি কি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন? এর জবাবে আয়হাম কামেল বলেন, শুধুমাত্র স্থিতিশীলতার জন্য দেশটির সংরক্ষিত রিজার্ভ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অার্থিক খাতে বিশ্বস্ত ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ; যা সংকট মোকাবেলায় ও বাজারে হস্তক্ষেপে কাতার সরকারকে সহায়তা করেছে।
সংকটকালীন সময়েও কাতার অনেক দেশে গ্যাস রফতানি অব্যাহত রেখেছিল; সেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। এটিও দেশটির অর্থনীতিকে ভেঙে পড়া ঠেকাতে সহায়তা করেছে।
তবে কূটনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি দেখা গেছে সেটি হচ্ছে, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই নয় বরং বিকল্প ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে নতুন নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি এবং তা পোক্ত করেছে কাতার। যে কারণে কাতার আন্তর্জাতিক পরিসরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনি।
এছাড়া গ্যাস সংরক্ষণ ও রফতানির ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছে দেশটি। যার ফলে দেশটির অর্থনীতি আজ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
অবরোধের বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রভাব কী? কামেল বলেন, অবরোধের প্রভাব সৌদি অর্থনীতির ওপর খুব কমই পড়েছে। তবে প্রভাব পড়েছে। সৌদি আরব থেকে কাতারে শিল্প খাতের পণ্য সামগ্রী, কৃষি সামগ্রী রফতানি হতো; তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সৌদি অর্থনীতির তুলনায় এই প্রভাব খুবই সীমিত।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশেষ করে দুবাইয়ের ক্ষেত্রে এই অবরোধের প্রভাব মারাত্মক এবং স্পষ্ট। দুবাই থেকে লন্ডন কিংবা নিউইয়র্কে আর্থিক যেসব লেনদন হতো তার সবকিছুর সঙ্গে কাতারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুবাই।
আরো স্পষ্টভাবে বললে জেবেল অালীর কথা বলা যায়। জেবেল আলী বর্তমানে কাতার রুট পরিবর্তন করে ওমানকে বেছে নিয়েছে। সুতরাং একটু তিক্ত প্রভাব যে আমিরাতের ওপর পড়েছে তা দেখাই যাচ্ছে। বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য এটা ভালো পরিস্থিতি নয়।