নিরাপরাধ মানুষ হত্যায় আল্লাহর শাস্তি
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা মানবজাতির জন্য জঘন্য অপরাধ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহর আইনে এ হত্যার শাস্তি ভয়াবহ। এর জন দুনিয়াতে তো এর শাস্তির বিধান রয়েছে আখেরাতেও আল্লাহর পক্ষ থেকে ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারীর অপরাধকে ইসলামে কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ভয়াবহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুনিয়াতে অহেতুক কাউকে প্রাণনাশ বা হত্যা করা সামাজিক অনাচার ও অত্যাচারের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে নরহত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (বনি ইসরাইল: ৩৩)
শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী হলো ‘নরহত্যা মহাপাপ।’ বিশ্বের সব ধর্ম নরহত্যার ন্যায় জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। মানবহত্যার পাপ শিরক সমতুল্য। রাসূলুল্লাহ (স) সতর্ক করে বলেছেন, ‘জঘন্যতম কবিরা গুনাহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শিরক সাব্যস্ত করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
নরহত্যার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে আল্লøাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো।’ (মায়িদা: ৩২) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (নিসা: ৯২-৯৩)
নরহত্যার ভয়ানক জঘন্যতা ও হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিযি) নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে গুরুতর।’ (নাসাঈ) নরহত্যার ভয়াবহতার কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহ সর্বপ্রথম রক্তের হিসাব নিবেন, তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করবেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যখনই কেউ অন্যায় ও অবৈধভাবে মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয় তার ওপর থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত উঠে যায়। নরহত্যা, বর্বরতা ও নাশকতার ফলে পৃথিবীর শান্তি বিনষ্ট হয় এবং ভূপৃষ্ঠে একের পর এক শাস্তি ও বিপর্যয় আপতিত হয়। সব গুনাহ ক্ষমা করলেও হত্যাকারীকে আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। নবী করিম (স) বলেছেন, ‘একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।’ (বুখারি) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মুমিন যদি পৃথিবীতে হারাম রক্তপাত না ঘটায়, তাহলে নিরাপদ ও স্বস্তিতে থাকবে।’ (বুখারি)