গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের কলকাঠি নেড়েছেন মওদুদ : জাহাঙ্গীর আলম
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পেছনে বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কলকাঠি নেড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ভোট স্থগিতে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল তা ছিল আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আগামী ১৫ মে খুলনার সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের আবেদনে গত ৬ মে নির্বাচনে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এই আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের আপিলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ বাতিল করে ভোট নেয়ার নির্দেশ দেয়। আগামী ২৮ জুনের মধ্যে সেখানে ভোট নিতে হবে।
বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে আইনজীবীরা এই শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত থাকলেও হাসান ছিলেন তার বাড়িতেই। তবে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন আদালতে। আর আদেশের পর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এটা গভীর ষড়যন্ত্র ছিল (রিট আবেদন) আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে, আমরা সেটা বুঝেছি। এজন্যই আমরা সর্বোচ্চ আদালতে এসেছি।’
রিট আবেদনকারী সুরুজ আওয়ামী লীগেরেই নেতা। তিনি নিজ দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন কেন, এমন প্রশ্ন ছিল জাহাঙ্গীরের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনি হচ্ছেন একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের চেয়ারম্যান। আর বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে মওদুদ আহমদ কেন এমন করলেন?’
সুরুজ গাজীপুরে নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা করেছেন। ৬ মে উচ্চ আদালতে রিটের আগে তিনি রিট করেন গত ১০ এপ্রিল। সেদিন তার আইনজীবী ছিলেন মওদুদ আহমদ। তবে সেই আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়। আর এই তথ্য গোপন করেই ৬ মে আবার আবেদন করেন শিমুলিয়ার চেয়ারম্যান।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এপ্রিল মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ তার (সুরুজ) পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে ভেটো দেওয়ার পরে সর্বশেষ মামলাটি নিয়ে যায়।’
‘যখন আমাদের ওখানে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচন চলছিল, আমরা মার্কাও পেয়েছিলাম। প্রচারণা শুরু করেছি। সেই সময়ে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আবার হাইকোর্টে সেই মামলাটি সেই চেয়ারম্যানকে এনে অন্য লইয়ারের মাধ্যমে তারা আমাদের এলাকার নির্বাচনটা স্থগিত করে দিয়েছে।’
‘ব্যারিস্টার মওদুদের একটা উদ্দেশ্য ছিল। আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা সুকৌশলে তারা এ কাজটি করেছে। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, নৌকা প্রতীক নিয়ে আমরা এক সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলাম।’
জাহাঙ্গীর জানান, ভোট স্থগিতের পর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথা হয় এবং তিনিই আদালতে বিষয়টি নিয়ে মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
‘প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আমি নিজেই হাইকোর্টে হাজির হয়ে আপিল করেছি। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে আজ এ আদেশ দিয়েছে।’
‘আদালতের এ আদেশের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনগণের যে আগ্রহ ছিল তার প্রতিফলিত হয়েছে। এজন্য সর্বোচ্চ আদালত অসংখ্য ধন্যবাদ।’
এ সময় প্রতিক্রিয়া জানান জাহাঙ্গীরের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিনও। তার বিএনপির আইনজীবীদের বক্তব্যের জবাব জানতে চান সাংবাদিকরা।
বিএনপির অভিযোগ, তাদের জয় ঠেকাতেই আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন স্থগিত করিয়েছিল। আর এ কারণেই হাসানের পর জাহাঙ্গীর আপিল করেছেন।
বিএনপির আইনজীবীদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। ওনি (জাহাঙ্গীর আলম) প্রথমেই এসেছিলেন। আজকের শুনানিতে ওনারা তো ঘটনার কথা বলেছেন। কেউ তো আইন দেখান নাই। আইনটা আমরা দেখিয়েছি।’
‘আদালত আমাদের সকলে মতামত গ্রহণ করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচনের গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মামলার মাধ্যমে আমাদের প্রার্থীর আইনি বিজয় হয়েছে।’