‘তারেকের বর্তমান অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়া অসাংবিধানিক’
নিউজ ডেস্ক : সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান কোনোভাবেই বাংলাদেশের কোনো দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন না। বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হলে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
পাসপোর্ট নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এবার তারেক রহমানের ব্রিটেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার তথ্য ফাস হওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে তার নাগরিকত্ব নিয়ে। আইনজীবীরা মতে, ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নিয়ে লন্ডন থেকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেওয়া অসাংবিধানিক।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘‘তারেক রহমানকে এ দেশে আসতে হবে। দেশে এসে যদি দলের নেতৃত্ব দিতে চায়, তাহলে সেভাবে তাকে কাজ করতে হবে। ব্রিটেনে থেকে একবার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিলে ধরে নিতে হবে তার এদেশের নাগরিকত্বটা স্থগিত আছে। তাহলে সেখঅন (ব্রিটেন) থেকে তারেক রহমান এই দেশে একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতি করতে পারবেন না। এটার সুযোগ নেই।’’
তারেক রহমান ২০১৫ সালে নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক পরিচয় দিয়ে হোয়াইট অ্যান্ড ব্লুকনসালট্যান্টস লিমিটেড নামে ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেন। নথি অনুসারে কোম্পানির ৫০ শতাংশ তারেক রহমানের এবং বাকি ৫০ শতাংশ তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের। ব্রিটিশ সরকারের কোম্পানিস হাউসে দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণীতে তারেক রহমান উল্লেখ করেছেন, তার বসবাসস্থল-ইংল্যান্ড, জাতীয়তা-ব্রিটিশ, পেশা-পরিচালক।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় । এর আগে অর্থপাচার মামলায় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এছাড়া, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এর বাইরেও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ আরও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ইতোমধ্যে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। যেসব মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই সাজা কার্যকর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া তারেক রহমান পরের বছর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। গত ১০ বছর ধরে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
এদিকে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ বলছে, আদালতের রায়ে ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কেউ সাজাভোগের ৫ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার আগে নির্বাচন করতে পারবেন না। কয়েকটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তারেক রহমানের।
তারেক রহমানের সংবাদ লিখতে গিয়ে আরো একটি খবর মনে পড়ে গেলো। পুজদেমনের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতাকামীরা স্পেন থেকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর স্পেনের জাতীয় সরকার কাতালোনিয়া সরকার ভেঙে দিয়ে পুজদেমনকে বরখাস্ত করে। এরপর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান পুজদেমন। স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট পুজদেমনকে গ্রেফতারের জন্য একটি ইউরোপিয়ান গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরে কাতালুনিয়ার সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাধীনতাপন্থি নেতা কার্লেস পুজদেমনের নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করে দেশটির সাংবিধানিক আদালত বলেছিল, বেলজিয়ামে অবস্থান করা পুজদেমন ‘বিদেশ থেকে নেতৃত্ব’ দিতে পারবেন না। স্পেন সরকারের ভাষ্য ছিল, কোনো ‘পালিয়ে থাকা’ ব্যক্তি আঞ্চলিক পার্লামেন্টের নেতৃত্ব দিতে পারে না। এরপর সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করা হয়।
তথ্য সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন, বাংলা ট্রিবিউন, বিডিনিউজ২৪