সময় হয়েছে আমাদের সন্তানদের নতুন করে মূল্যায়নের
মন্জুর রহমান : গতকাল বিটিআরসির সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে “HSC batch 2018” একটি চিঠি লিখে। চিঠির মূল বিষয়বস্তু “এবার পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র, বোটানির এমসিকিউ প্রশ্ন খুবই কঠিন হয়েছে, রসায়ন ২য় পত্রের আগে মাত্র একদিন বন্ধ ও গণিতের প্রশ্নের প্রিন্টিং সেই লেভেলের বাজে ছিলো যে জন্যে জ্যামিতির অক্ষ ভালোমত বুঝা যাচ্ছিলোনা ।”(মন্তব্যে চিঠিটি সংযুক্ত করে দিলাম)
তাদের এই চিঠিতে বেশীরভাগই হাসির রিয়েক্ট দিয়েছেন। বর্তমান প্রজন্মের মেধা নিয়া প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ ভুলে যাচ্ছেন ইনাদের তৈরী করা সরকারি ওয়েবসাইট কিন্তু এই মেধাহীন প্রজন্মই হ্যাক করে ফেলেছে ।
ছুটি কম থাকায় ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগকে অনেকে হাস্যকর বলছেন। আমি নিশ্চিত ইনারা বর্তমান রসায়ন ২য় পত্রের সিলেবাস সম্পর্কে অবগত নন। আমাদের সময় রসায়ন ২য় পত্র পুরোটাই ছিলো জৈব যৌগ, সাথে পর্যায় সারণীর গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি চ্যাপ্টার। কোনো ম্যাথ ছিলোনা। কিন্তু এখন রসায়ন ২য় পত্রে জৈবযৌগ পুরোটা, সাথে আমাদের সময়ে ১ম পত্রে থাকা গ্যাসীয় গণনা, রাসায়নিক গণনা, জারন-বিজারন, তড়িৎ বিশ্লেষণ, তড়িত রসায়ন সহ পরিবেশ ও কর্মমুখী রসায়ন । এবার হিসাব করেন, এরকম বিশাল সিলেবাস সমৃদ্ধ একটি বিষয়ে মাত্র একদিন সময় পর্যাপ্ত কিনা । যদিও আমাদের সময়ে আমরা প্রতিটি বিষয়ের আগে দুই-তিনদিন করে বন্ধ পাইছিলাম, ম্যাথের আগেতো বিশ দিন বন্ধ পাইছিলাম !
আবার অনেকেই বলছেন, প্রশ্ন কঠিন হয়েছে তাতেই এত কান্নাকাটির কি আছে ? আমিও একমত, প্রশ্ন কঠিন হলে কান্নাকাটির কিছু নাই। এইটা আমার কাছেও লেইম ঠেকেছে। তবে যারা বলছেন আমাদের সময়ে প্রশ্নের মান এর থেকেও কঠিন ছিলো, তাদের বলি : আমাদের মানে আপনাদের সময়ের প্রশ্ন দেখলে বর্তমান প্রজন্মের পোলাপান আফসোস করে, “ইশ, এত সহজ প্রশ্ন ছিলো !” আপনারা যেমন ওদের নিয়া হাসাহাসি করেন, তেমনি ওরাও আমাদের নিয়া হাসাহাসি করে “ভাইয়া, এত সহজ প্রশ্নে আপনারা পরীক্ষা দিয়েছেন? ”
.
প্রজন্মের গ্যাপ আমাদের মাঝে এই সমস্যাগুলো তৈরী করছে । আমরা বুঝতে চাইনা, দিন যত আগাচ্ছে পড়ালেখা তত কঠিন হচ্ছে, সিলেবাস ও প্রশ্নের মানও তত উন্নত হচ্ছে। আমাদের সময় আমরা এই ছিলাম, সেই ছিলাম ভাইবা বর্তমান প্রজন্মের মেধাকে অবজ্ঞা করা আপনার আমার বাতুলতা । নিজ প্রজন্মকেন্দ্রিক আত্মহমিকায় ডুবে না থেকে আমাদের উচিৎ পরবর্তী প্রজন্মের অর্জন ও অভিযোগকে সম্মান করা ।