ঢাকার সড়কে ঝাড়ুদার গাড়ি নামিয়েছে ডিএনসিসি
সড়কে জমে থাকা আবর্জনা ও ধুলাবালু পরিষ্কারের জন্য প্রতিদিন ভোরে ঝাড়ু হাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তোড়জোড় নগর জীবনের একটি নৈমিত্তিক দৃশ্য। সড়ক পরিচ্ছন্ন করার এই প্রথাগত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকার রাস্তায় নতুন একটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নামিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ‘মেকানিক্যাল রোড সুইপার’ নামে পরিচিত এই গাড়িটি কাজ করছে রাতের নিভৃতে।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৫ মার্চ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা এই গাড়িটি ডিএনসিসি এলাকার দুটি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। একটি রুট সার্ক ফোয়ারা থেকে বিজয় সরণি হয়ে বনানী ওভারপাস পর্যন্ত। অন্যটি বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, গুলশান অ্যাভিনিউ, শুটিং ক্লাব থেকে তেজগাঁও লিংক রোড ও গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর হয়ে বাড্ডা নতুন বাজার পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ৫ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত ৫৮ দিনের মধে্য ৪১ দিনে এই দুটি রুটে স্বয়ংক্রিয় গাড়িটি মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৮২ কিলোগ্রাম আবর্জনা অপসারণ করেছে। এ আবর্জনা অপসারণ করতে ২ হাজার ১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দরকার হতো। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গতি আনার জন্য আগামী অর্থবছরে এ ধরনের আরও তিনটি গাড়ি আমদানির পরিকল্পনা করছে ডিএনসিসি।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তাঁর জীবদ্দশায় ‘মেকানিক্যাল রোড সুইপার’ নামের এই আধুনিক যন্ত্রটি ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। সব প্রক্রিয়া শেষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রোড সুইপারটি ডিএনসিসির হাতে পৌঁছায়। এর চেসিস তৈরি করেছে জাপানের হিনো কোম্পানি। আর সুইপার মেশিনটি যুক্তরাজ্যের জনস্টন কোম্পানির তৈরি।
প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার সময় ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ডিএনসিসির আটজন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আরও আটজন স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও গুণগত মান উন্নত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
মেকানিক্যাল রোড সুইপারটির অবয়ব অনেকটা কাভার্ড ভ্যানের মতো। এর দুই ভাগে বিভক্ত ইঞ্জিনের একাংশের কাজ পথগাড়িটি সচল রাখা। অন্য অংশটি ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করে। সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা শুষে নেওয়ার জন্য গাড়িটিতে আছে দুটি শোষণ পাইপ। ইঞ্জিনের এই অংশটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে আবর্জনা ওপরের ট্যাংকারে জমা হয়। এর ধারণক্ষমতা ছয় টন। এ ছাড়া গাড়ির সঙ্গে থাকা আরেকটি ট্যাংক থেকে সড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থাও রয়েছে।
ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন যে পরিমাণ আবর্জনা তৈরি হয়, তাতে এগুলো অপসারণের জন্য প্রথাগত পদ্ধতি এখন আর যথেষ্ট নয়। সাধারণ উপায়ে ঝাড়ু দিয়ে বর্জ্য এক জায়গায় জমা করার পর সেখান থেকে আবার অপসারণের সময় কিছু ময়লা থেকেই যায়। কিন্তু মেকানিক্যাল রোড সুইপার ধুলার দানা পর্যন্ত টেনে নেয়। চাইলে গাড়ির ট্যাংকে জমা হওয়া বর্জ্য সরাসরি ল্যান্ড ফিলে নিয়েও ফেলা যায়।
তবে ঢাকার সড়কে এই গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সার্ক ফোয়ারা থেকে বিজয় সরণি হয়ে বনানী ওভারপাস পর্যন্ত রুটটির দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। এতে সুইপিং ট্র্যাক রয়েছে চারটি। কিন্তু আমরা দুটি ট্র্যাকে এটি চালাতে পারি। কারণ, এই রুটের ফুটপাত ঘেঁষে ইউ আকৃতির যে নতুন ড্রেন তৈরি করা হয়েছে, তা থেকে গাড়িটি আবর্জনা অপসারণ করতে পারে না।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণি বলেন, ‘মেকানিক্যাল রোড সুইপার ব্যবহারে যে সফলতা এসেছে, তাতে আমরা এ ধরনের আরও তিনটি গাড়ি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির সব সড়ক পরিষ্কারের কাজে এই গাড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।’