একজন গোফরান মাষ্টারের কথা
বাঞ্ছারামপুর প্রতিবেদক : ‘তিনি নিজে যেমন সারাক্ষন হাসেন,তেমনি আরেকজনকে হাসাতে জানেন।তিনি প্রতিদিন স্কুলে প্রবেশ করেই সহকর্মী শিক্ষকদের খোজখবর নেন।সমস্যা গ্রস্থ কোন সহকর্মী থাকলে তিনি যেচে এগিয়ে যান আন্তরিকভাবে।বিভিন্ন প্রকার অপ্রকাশিত সহায়তা করেন।নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করা কেবল একজন সাদা মনের মানুষখ্যাত গোফরান মোস্তফার ক্ষেত্রেই খাটে’-কৃতজ্ঞতাচিত্তে কথাগুলো বলছিলেন বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষীকা হিসেবে নির্বাচিত আফসারী খানম লাকী।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মীর রফিকুল ইসলাম গোফরান মোস্তফা সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে বলেন,সম্প্রতি শেষ হওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবী আদায়ে শিক্ষকদের সংগঠিত করা ও দাবী আদায় করে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে নের্তৃত্বে সবার আগে ছিলেন গোফরান মোস্তফা।উনি খুব ভালো মানুষ।তিনি শিক্ষকদের আগলে রাখতে জানেন।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইনুদ্দিন মিয়া বলেন,‘রাজধানীর রাজপথে সাম্প্রতিকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবী আদায়ে একাধারে বহুদিন রাস্তায় শুয়ে বসে থেকেছেন,করেছেন আমরন অনশন,মিছিলে মিছিলে শ্লোগান দিতে হলে তখন মনে হচ্ছিলো গোফরান মাষ্টার ছাড়া বিকল্প নাই।’
খোজ নিয়ে জানা গেছে,সৎ,ধার্মিক ও পরোপকারী হিসেবে সারা জেলায় ব্যাপক পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।গত ১ এপ্রিল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন জেলার সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান মিলনায়তনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।এরআগে,তিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন জেলা সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লোকমান হোসেন।সে সাথে তিনি বাংলাদেশ সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
এদিকে,আজ বৃহস্পতিবার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতি,বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখা, কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশন যৌথভাবে মো.গোফরান মোস্তফা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান।অভিনন্দনে সিক্ত অমায়িক ও ভদ্র,স্পষ্টভাষী গোফরান মোস্তফা বলেন,‘আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সকল সহকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরন,অসুস্থ্য শিক্ষকদের সাহায্য,শিক্ষকদের মেধাবী শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি প্রদান,অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শিক্ষকদের যথাযথ সন্মান প্রদর্শন ও সহায়তা প্রদান করতে চাই।তাদের পাশে দাড়াতে চাই।আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।প্রয়োজনে নিজের পৈত্রিক জমি বিক্রি করে হলেও শিক্ষকদের সেবায় আমৃর্ত্যূ কাজ করতে চাই।কারন,শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর।’’
খোজ নিয়ে জানা গেছে,বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার এলু খানের ছেলে গোফরান মাষ্টার।স্ত্রী আয়েশা আক্তারও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষীকা।এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি।সাদাসিধে জীবন যাপন করেন।মাস গেলে যে টাকা মাইনা পান,সে টাকা তিনি পরিবারের জন্য খরচ না করে,বিভিন্ন অসহায়,সমস্যাগ্রস্থ শিক্ষকদের পেছনে ব্যয় করেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.নৌশাদ মাহমুদ বলেন,-‘আমার কাছে মনে হয় তিনি গোফরান মাষ্টার) কিছুটা বোকা কিসিমের লোক।তিনি একটু বেশী ভালো মানুষ।নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শিক্ষকদের সেবা করে বেরায়।কিন্তু বেচারার স্বার্থসিদ্ধির কোন টার্গেট নাই।কোন তদ্বীর,কোন শিক্ষকের বদলীর জন্য কখনো সুপারিশের জন্য আসেননি।এ রকম মানুষ ডিজিটাল যুগে অচল!’’
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম,বাঞ্ছারামপুর শাখার সহসভাপতি সাংবাদিক সালমা আহমেদ বলেন,-‘গোফরান মোস্তফা স্যার একজন সাদা মনের মানুষ।কি করে অন্যের উপকার করা যায়,সেদিকে তার ধ্যান-জ্ঞান।এজন্য আমরা তাকে ‘টিচার অব দ্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ খেতাব দিয়েছি।তিনি আসলেই অনুস্বরনীয়,অনুকরনীয়।’