পরীক্ষার আগেই ভর্তি : নির্দেশনা মানছে না কোচিং সেন্টারগুলো
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং সেন্টারগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুতি কোর্সে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। রাজধানীর কোচিং সেন্টারগুলো ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৯ মার্চ থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি, মাদরাসা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়। শেষ হবে ১৪ মে। অর্থাৎ ১৪ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেটের ৮৩, গ্রিন রোডে অবস্থিত ইউসিসি কোচিং সেন্টারের বাইরে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে নিচতলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি কোর্সের তথ্য দেয়া হচ্ছে। আগে আসলে আগের ব্যাচে ভর্তির সুযোগ পাবেন- এ শর্তে সেখানে ভর্তি চলছে। অনলাইনে ভর্তি করে বিকাশের মাধ্যমে কোর্স ফি আদায় করা হচ্ছে।
ভর্তির তথ্যদাতা ইউসিসি কোচিং সেন্টারের ডেক্স কর্মকর্তা আইরিন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পহেলা মার্চ থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু করেছেন। বর্তমানে তাদের প্রায় ৩০টি ব্যাচ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচে ১০ থেকে ১৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় অনলাইনে ভর্তি করা হচ্ছে। বিকাশের মাধ্যমে ভর্তি-ফি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অফিসেও সরাসরি ভর্তি করা হচ্ছে।’
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে- জানতে চাইলে ইউসিসি’র পরিচালক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কোচিং সেন্টারের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতিমূলক কোর্স করিয়ে থাকি। তাই পরীক্ষার আগে থেকেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয় নতুবা পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। যেহেতু কোচিং সেন্টার বন্ধ তাই অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।’
কেউ অকৃতকার্য বা ভর্তি হতে আপত্তি জানালে তাকে ভর্তি-ফি ফিরিয়ে দেয়া হয় কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে তারাই মূলত ভর্তি হবে। অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানবিক কারণে অনেক সময় এসব বিষয় বিবেচনা করা হয়।’
মৌচাক ৯০/১, নিউ সার্কুলার রোডের মুকুল টাওয়ারে ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নোটিশ বোর্ডে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে ভেতরে দুজন কর্মকর্তা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তাসনিম মুরাদ ভেতরের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই আমরা ব্যাচ তৈরি করি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দু-তিনদিন পর ক্লাস শুরু হয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করছি।’
‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে আমরা ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি’- যোগ করেন তিনি। অন্যদিকে, রেটিনা, থ্রি ডক্টর’স, এথিনা, বীকন, কনফিডেন্স, মেডিকো, ইথিকাসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোচিং সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সহ-সভাপতি মাহাবুব আরেফিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রেখেই কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম পারিচালনা করছি। এ কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি কোর্সে ভর্তি শুরু করা হয় নতুবা পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। এ কারণে সরকারি নির্দেশনা মেনে কোচিং সেন্টারগুলোর ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রেখে শুধু শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশ্ন ফাঁসে কোনো প্রভাব পড়ে না। এ কারণে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামী ১৪ মে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শেষ হবার পর সব কোচিং সেন্টারে ভর্তির প্রস্তুতি ক্লাস শুরু হবে।’