বুধবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০১৮ ইং ১২ই বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নকলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন : লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৭৪১৫ মে:টন

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি : শেরপুরের নকলা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক বইতে শুরু করেছে। কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটলে উপজেলায় ফসল উতপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছর নকলা উপজেলার উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছিল ৬১৯৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড ৬৪৭৫ হেক্টর, স্থানীয় ৮০ হেক্টরসহ মোট ১২৭৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। যার উতপাদন ছিল ৫১৩৫২ মে: টন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর নকলা উপজেলার উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে ৬২৭৫ হেক্টর এবং হাইব্রিড ৭২৪০ হেক্টর, স্থানীয় ৪০ হেক্টর. মোট ১৩৫৫৫ হেক্টর। যার উতপাদন লক্ষ্যমাত্রা কৃষি বিভাগ নির্ধারণ করেছেন উফশী ২৪৩২৭ মে: টন, হাইব্রিড ৩৪২৯৫ মে: টন ও স্থানীয় ১৩৫ মে:টন। সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আবাদ হয়েছে গত বছরের তুলনায় ৮০৫ হেক্টর বেশি জমিতে ৭৪১৫ মে: টন উতপাদন বেশি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ব্লাস্ট আক্রমণ দেখা দেয়ার পর কৃষি বিভাগ কর্তৃক হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে দ্রুত কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়া, মসজিদ ও বাজারে রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং তাতক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রাখার ব্যবস্থা করে রোগের আক্রমণ দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ফলে ভয়াবহতার হাত থেকে কৃষকরা রেহাই পেয়েছিল।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, ঝড়ো বাতাস, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করায় ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশনায় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে হ্যান্ডবিল প্রকাশ ও প্রচার, পার্চিং উতসব, দলীয় মিটিং ও বাজার-দোকানে মতবিনিময়ের মাধ্যমে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে ব্লাস্ট রোগ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফলে ব্লাস্ট আক্রমণ বাড়তে পারেনি এবং আক্রান্ত এলাকার ক্ষতি নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে।

সম্প্রতি রোববারে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃস্টির কারনে উপজেলার বোরো আবাদের কিছুটা ক্ষতি হলেও উপজেলার কৃষি অফিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে মাঠের বোরো ধান ৮০% পাকলেই দ্রæত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য অনুরোধ করে এমন প্রচারনা ছিল লক্ষনীয়।

আগামীতে যাতে ব্লাস্ট আক্রমণ না হয় সেজন্য আক্রান্ত জমির নাড়া পুড়িয়ে দেয়া, আক্রান্ত ও তার পাশের জমির বীজ সংরক্ষণ না করা, বীজ শোধন করে (ছত্রাক নাশক ব্যবহার) পরবর্তীতে বীজ ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও নকলায় বোরো ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ জন্য আমরা হাইব্রিড আবাদ বৃদ্ধি, ১০০% উফশী জাতের ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, লাইন-লোগো, পার্চিং এবং গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার করতে কাজ করেছি। এছাড়া অতন্ত্র জরিপ, আলোর ফাঁদ ব্যবহার, সুইপিং নেট ব্যবহার, কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। সর্বোপরি কৃষিবান্ধব সরকারের স্বদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে আজকে আমরা বোরো আবাদে সফলতার হাসি দেখতে যাচ্ছি।

কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, যে কোন বীজ চাষ করার সময় শোধন করে নিতে হবে। বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাতে ফসল আক্রান্ত না হলেও ব্লাস্ট প্রতিরোধের জন্য ব্লাস্টিনটটনি/ন্যাটিবো/ফিলিয়া প্রয়োগ করতে হবে। একবার প্রয়োগ করার ৫-৭ দিন পর আারও একবার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

উপজেলার ভুরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উতপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল, পোলাদেশী অগ্নিবিনা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাবের সভাপতি কিতাব আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, বাছুর আলগা মুকছেদ, আদিম, মুক্তার আলী, চরকৈয়ার জিন্নত আলী, মমিনাকান্দার হোসেন আলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবছর বোরো আবাদের শুরুতেই আবহাওয়া ভালো পাওয়ায় ও উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় তত্তাবধায়ন করায় লক্ষমাত্রার অধিক ফলন হয়েছে। ধানের দাম এবং বর্তমান আবহাওয়াও ভালো থাকলে  গেল কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারব।

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

বাংলাদেশিদের ‘রোহিঙ্গা’ সাজিয়ে পাচার

দেশে এলএনজির প্রথম চালান নিয়ে ভিড়ল বিশাল জাহাজ

ফেনীতে গৃহবধূকে গুলি করে হত্যাকারী যুবলীগ নেতা

বাড়িতে ডেকে প্রেমিকের শরীরে আগুন দিলো প্রেমিকা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৫ বছর

কালীগঞ্জে হত্যা মামলায় ১৩ জনের ফাঁসি