ফুটবল মাঠে আবারও জনপ্রিয়তার জোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভিন্ন দৃশ্যপট
আল আমীন শাহীন : “ফুটবল নিয়ে কাড়াকাড়ি,ফুটবল নিয়ে লড়াই, কেহ কারো নাহি ছাড়ে সমান সমানে”এমনই ঘোষণায় ক্রীড়ামোদী দর্শকদের মনে সৃষ্টি হয় ভিন্নমাত্রার উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। বয়সে প্রবীণ যাঁরা তাঁদের স্মৃতিতে ভেসে উঠে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়াম,সেই মেলা আর খেলার মাঠ। পড়ন্ত বিকেলে সহনীয় রৌদ্রতাপ আর মিষ্টি আলোর দ্যুতি,পুরো মাঠ সবুজ দূর্বার গালিচা,পশ্চিম দিকের ছোট প্যাভিলয়ন,গ্যালারী বিহীন মাঠের চারপাশে দর্র্শকদের ভীর, চিনাবাদামের গন্ধ,মাঠে একটি বল নিয়ে দেশী বিদেশী ২২ জন খেলোয়ারের ক্রীড়া নৈপুন্যে, ব্যাপক আনন্দ উচ্ছা¦স, কালো কাঠের উপর রূপালী আর সোনালী প্রলেপের কারুকাজের বাসন্তী , তোফায়েল আজম শিল্ড ইত্যাদী। স্মৃতিতে সেই সোনালী দিনের কথা মনে করে মনের মাঝে আনন্দ জাগলেও হতাশা এসে জমে মনে, দুঃখজনক হলেও সত্য ফুটবলের জনপ্রিয়তার গৌরবোজ্¦ল অদ্যায়,ফেলে আসা সময়ের সেই দৃশ্যপট স্মৃতির গহবরে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল দিন দিন।
ফুটবল খেলা থাকলেও দর্শকদের সরব উপস্থিতি হ্রাস পাওয়ায় কারো কারো মনে ছিল দীর্ঘশ্বাস। এই নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে টিকেট এর বিনিময়ে খেলা উপভোগ করতো একসময় হাজার হাজার মানুষ। টিনের বেড়া দিয়ে যেখানে হতো খেলার আয়োজন, দেয়াল ডিঙ্গিয়ে , পাহাড়াদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা দূরন্তপনায় কিশোর যুবরা একসময় মাঠে প্রবেশ করেছে, গাছে চড়ে , দেয়ালে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছে অনেকে। সেই মাঠে দর্র্শক ছিলনা বল্লেই চলে, নানা প্রচারণা থাকলেও আয়োজক , খেলোয়ার আর হাতে গোণা দর্শক উপস্থিতি দেখা গেছে একই স্থানে একই মাঠে। দীর্ঘদিন ছিল এমনই দৃশ্যপট। অবস্থার পরিবর্তনে আয়োজকদের নানা চেষ্টা থাকলেও জোয়ার ছিল না দর্শকদের মাঝে। তবে এবার জেলা প্রশাসক গোল্ড কাপ ফুটবল ট’র্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় মাঠে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র, মাঠে দর্শক জোয়ার , এ যেন এক নতুন মাত্রায় হারনো দিন ফিরে পাওয়া। গ্যালারী ভরা দর্শক,ডাক ঢোল সানাই, আয়োজক দর্শক খেলোয়ার সবার মাঝেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। ১২ মার্চ ২০১৮ সোমবার সারা শহর জুড়েই দিনভর ছিল ফুটভর খেলা নিয়ে উৎসব আমেজ।
বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে জটলা করে মাঠের পানে দর্শকদের অভিযাত্রা। উৎসাহী সমর্থকদের নানা সাজসজ্জা। মোটর সাইকেল বহর নিয়ে সারা শহরেই সমর্র্থকদের বিচরণ। জানা গেছে বিভিন্ন হোটেল রেস্তরাঁয় খেলা উপলক্ষে ভোজন রসিকদের ভীরও ছিল। পরিচ্ছদে ফুটবলের প্রতি প্রতিদ্বন্ধি দু দলেরই ভালবাসার ছিল অনন্য দৃষ্টান্ত, জয়ের লক্ষে শক্তিশালী দল গঠনে নামকরা দেশী বিদেশী খেলোয়ারদের সম্পৃক্তকরণ, সমর্তকদের উৎসাহ দেয়া, মাঠে দর্শক আনতে নানা তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। পোষাকেও ছিল এবার ভালবাসার আচ্ছাদন। হালকা নীল টি শার্ট ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা একাদশের সমর্র্থকদের গায়ে, অন্যদিকে গাঢ় নীল টি শার্ট ছিল সদর উপজেলা একাদশের সমর্র্থকদের পোষাক। নীলে নীলে ভালবাসা ছড়িয়ে ছিল মাঠ জুড়ে। আকাশের নীল এর মাঠে দুদলের হালকা গাড় নীল সাজ জানান দিচ্ছিল ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ।
খেলোয়ারদের পোষাকই ছিল একই। মাঠের পূব গ্যালারীতে রৌদ্রতাপ এড়াতে আলাদা প্যান্ডেল, পশ্চিমে গ্যালারী ভরা নানাবয়সী দর্শক, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ,নতুন প্রজন্মের কিশোর তরুণ যুবা, প্রবীণ নবীন ক্রীড়া মোদী দর্শকদের এক মহামিলন ঘটেছে ঐতিহ্যবাহী নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে। দেশী বিদেশী খেলোয়ারদের আকর্ষনীয় ক্রীড়া নৈপুন্যে নির্ধারিত সময় ছিল গোল শূন্য। পরে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে, এতে জয়লাভ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা একাদশ। পুরো আয়োজনে আয়োজকদের ব্যতিব্যস্ততা ছিল ভিন্ন রকম। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ছিল ব্যাপক তৎপরতা। বাঁধভাঙ্গা আনন্দ জোয়ার সামলাতে কিছুটা কষ্টই হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মাননীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আহবান ছিল ফুটবলের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে হবে, সেই জনপ্রিয়তার জোয়ার দেখে তিনিও ছিলেন মাঠে প্রাণবন্ত উচ্ছসিত আনন্দিত। জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি রেজওয়ানুর রহমান দর্শক চেয়েছেন মাঠে এই জোয়ারে তিনিও ভেসেছেন আনন্দ ভেলায়। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী মন্টু সহ নবীণ প্রবীণ ফুটবল খেলোয়াররা সাংগঠনিক তৎপরতায় ব্যস্তায় মুখর ছিলেন।
খেলার মাঠে ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্ধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা দলের প্রধান পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর, পৌর কাউন্সিলর কর্মকর্তা পৌরবাসী আর সদর উপজেলা একাদশের পক্ষে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ, সদর উপজেলার দর্র্শকবৃন্দ ছিল সরব। সকলের উদ্দীপনা উৎসাহ সকলেরই দৃষ্টি করেছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব আমেজ আর আনন্দঘন বিনোদনে সম্পন্ন হয়েছে ফাইনাল খেলা, যা ছিল ক্রীড়ামোদীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণের নেপথ্যে ছিল ঐকান্তিকতা আর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। ফুটবলের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আয়োজকদের নানামূখী উদ্যোগে গভীর আন্তরিকতা থাকায় সফলতার নবদ্বার উন্মোচিত হয়েছে।সমি¥িলিতভাবে ফুটবলের সঙ্গে ভালবাসায় মিশে যাওয়া ভিন্ন দৃশ্রপট তৈরী করেছে। সকলের উৎসাহ অনুপ্রেরণা এবার দর্র্শকদের মাঠের প্রতি ধাবিত করেছে। নানা শ্রেনীর ক্রীড়ামোদীরা পেয়েছে নির্মল বিনোদন। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য বিকশিত ধারায় নবগতি পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকুক এই কামনা এখন সকল মহলের।
লেখক : সিনিয়র সহ সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, সম্পাদক নতুন মাত্রা।