আইনজীবী কাঁদলেন, চোখ মুছলেন খালেদা জিয়াও
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান উল্লাহ যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে বলেন, ‘কোনো নথি ছাড়া হাওয়ার ওপরই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা মামলা খেলায় বেগম জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ এ পর্যন্ত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। যে সন্তান হারায় সে বোঝে সন্তানের ব্যথা কী জিনিস!’
এ সময় আইনজীবী আহসান উল্লাহ কেঁদে ফেলেন। এ সময় বিচারকের সামনে বসা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও কেঁদে ফেলেন। তাঁকে একাধিকবার চোখ মুছতে দেখা যায়। এ সময় আদালতের পরিবেশ কিছুটা ভারি হয়ে ওঠে।
আইনজীবীর উল্লেখ করা ‘প্রাণ হারানো’ তিনজন হচ্ছেন, খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, শরাফ উদ্দিনের ছেলে সাইয়েদ আহমেদ ও একজন আইনজীবী।
আজ বুধবার রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচারক ড. আখতারুজ্জামান আদালতে শুনানিকালে আইনজীবী আহসান উল্লাহ এসব কথা বলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আজ অন্য আসামিদের যুক্তিতর্ক হয়েছে।
আরও : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে—ধারণা চিকিৎসকের
বুধবার সকালে রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছার পর পরই বিচারক ড. আখতারুজ্জামান মামলার শুনানি শুরু করেন। বিকেলে বিচারক আগামীকাল সকাল পর্যন্ত মামলা মুলতবি করেন।
এদিন এ মামলার আসামি কাজী সলিমুল হক ও শরাফ উদ্দিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন তাঁদের আইনজীবী আহসান উল্লাহ।
আইনজীবী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত মামলার আতঙ্কে এবং মানসিক চাপে অনেকে অসুস্থ হয়ে গেছে। আপনার বয়স কত আমি জানি না। তবে এখানে অনেক আসামির বয়স ৬০ বছরের ওপরে। আর এ বয়সে জেলে থেকে কাপড়ে প্রস্রাব–পায়খানা করলেও বুঝতে পারে না।’
ওই আইনজীবী বলেন, ‘একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং সেনা অফিসারের ছেলে তারেক রহমান। স্বাধীনতা যুদ্ধে যার অবদান ছিল আকাশচুম্বী। তারেক রহমান ছিল নাবালক ছেলে। অথচ এসব ভুয়া মামলায় তাকে হাত দুটি উঁচু করে বেঁধে নির্যাতন করা হলো। যার কারণে উনার পিঠের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমি মনে করি অসুস্থতার মধ্যে হাঁড়ের ইনজুরি সবচেয়ে বেশি কষ্টকর। বিজ্ঞ আদালত,আমি কোনো রাজনীতি করি না। কিন্তু এটা বিশ্বাস করি এতবড় একটা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে হবে?’
আইনজীবী আহসান উল্লাহ এ সময় একটি গল্প উপস্থাপন করে বলেন, ‘কিছু শিশু একটি পুকুরের ভাসমানকে ব্যাঙকে লক্ষ্য করে ইট মারছে। এ সময় হঠাৎ ব্যাঙের জবান খুলে গেলে। ব্যাঙ বলল, বাচ্চারা আমায় ইট মারছ কেন? তখন বাচ্চারা জবাব দিল মজা করে মারছি। এ সময় ব্যাঙ বলল, তোমাদের মজায় যে আমার প্রাণ যায়! এখানে ও মামলা মামলা খেলায় এ পর্যন্ত তিনজনের প্রাণ গেল। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ তদন্ত করার সময় নিজেই স্বীকার করেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী হয়েছে এবং ডিড হয়েছে।
ট্রাস্টের নামে যে জমি কেনা হয়েছে, তাও প্রতিষ্ঠিত। এখান থেকে একটি টাকাও আত্মসাৎ করা হয়নি; বরং দুই কোটি টাকা এখন ব্যাংকে বৃদ্ধি পেয়ে ছয় কোটি টাকা হয়েছে। টাকা অব্যয়কৃত ছিল। টাকা যদি ব্যয় হতো, সুদ তুলে খেত অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যয় করলে অপরাধ হয়। কিন্তু এখানে তো কিছুই হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা সঠিকভাবে তদন্তও করতে পারেনি।’