মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০১৭ ইং ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘হোয়াট ইজ ডেভেলপমেন্ট’; প্রশ্ন ফখরুলের

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২৫, ২০১৭

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘লেকের ওপর জায়গা করে বুলেট প্রুফ মঞ্চের ওপর যখন বক্তৃতা দিয়ে বলা হয় যে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল, তখন ইচ্ছা করে জিজ্ঞেস করতে—আসলে উন্নয়ন কী, হোয়াট ইজ ডেভেলপমেন্ট?’

আজ শনিবার বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে এক সেমিনারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি টিচার্স (অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স) সেমিনারটির আয়োজন করে। ‘তারেক রহমান-এর রাজনীতি এবং কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম হাফিজ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল শাখায় স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে সমাবেশ করেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বড় গলায়, বড় বড় অনুষ্ঠান করছে। স্কুলের ছাত্রদের হাজির করছে। শিক্ষকদের সরকারি চিঠি পাঠায় যে হাজির না হলে স্কুলের উন্নয়ন বন্ধ হবে এবং চাকরি চলে যাবে। সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের চিঠি দেয় যে সমাবেশে হাজির না হলে পাঁচ দিন-ছয় দিন বা এক মাসের বেতন কেটে নেওয়া হবে! লেক তৈরি করে সেই লেকের ওপর জায়গা তৈরি করে ‘বুলেট প্রুফ’ মঞ্চের মধ্যে যখন বলা হয় যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোড মডেল, তখন জানতে ইচ্ছা করে—উন্নয়ন কী, হোয়াট ইজ ডেভেলপমেন্ট?

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উন্নয়ন বলতে গুটি কতক ব্যক্তির উন্নয়ন হচ্ছে। দেশে অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, তারা শেষ হয়ে গেছে, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের কথা শোনারও কেউ নেই।

বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ বিষয়ে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই ভাষণ ইউনেসকো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খুব ভালো কথা। বিষয়টি অস্বীকার করেছে কে? আপনারা এই এত বছর পর হঠাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে নামছেন, যখন দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন হয়েছে কার? উন্নয়ন হয়েছে আপনাদের। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, বিনিয়োগ ও উৎপাদন না বাড়ালে টেকসই উন্নয়ন হয় না। আর টেকসই গণতন্ত্র ছাড়া কখনোই টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব না।’

সরকার দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে অভিযোগ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনকেই যদি ধ্বংস করে ফেলা হয়, তাহলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে কে? সরকার বিচার বিভাগ শেষ করে ফেলেছে। মতের সঙ্গে মিল না হওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে প্রথমে এক মাসের ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরে তাঁকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

সংবিধান কারা সংশোধন করেছেন—এ প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, যাঁরা সংবিধান সংশোধন করেছেন, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি নন। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা সংবিধানে যে সংশোধন এনেছেন, সেই সংশোধন অনুসারে তাঁরা নির্বাচনের কথা বলছেন। তারপরও তো রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা সরকার দেবে? তিনি আরও বলেন, সরকার সভা করতে দেয় না, সমাবেশ করতে দেয় না। একটি সমাবেশ করতে গেলে তার আগে ১০০টি অনুমতি নিতে হয়। বিএনপি অনুষ্ঠান করার সুযোগ পায় না। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশ ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হয়ে যাবে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সমঝোতা হলো। যেসব রোহিঙ্গা এ বছর এসেছে, তাদের নাকি ফেরত নেওয়া হবে! বাকিদের কী হবে? কবে নাগাদ ফেরত নেওয়া কার্যক্রম শুরু হবে এবং শেষ হবে—এসব কিছুই সেখানে উল্লেখ নেই। জাতিসংঘকে বাইরে রেখে এবং অন্য দেশগুলোকে বাইরে রেখে এই কাজগুলো অতি দ্রুত করা হলো। তিনি অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিকভাবে সাহায্য চাওয়ার জন্য চীন, ভারত ও রাশিয়া সফর করতে পারতেন; তিনি সেটাও করেননি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইদ্রিস মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রধান বক্তা ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়োজক সংগঠনের শিক্ষকেরা সেমিনারে অংশ নেন। তাঁরা সংক্ষেপে বিএনপি ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সম্পর্কে বক্তব্য দেন।