মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০১৭ ইং ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

দুর্ভাগ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারেনি : প্রধানমন্ত্রী

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২৫, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। একটি জাতির জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনের অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পর থেকে তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এদেশের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। দুর্ভাগ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারে নাই। তারা ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তার জানে না— ইতহাস মুছে ফেলা যায় না।’

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া পঁচাত্তরে নিহত জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতিও শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইউনেস্কো এবং এর সাবেক মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়ছে সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের কথা। আমরা এসেছিলাম। বক্তৃতাও শুনেছিলাম। বারবার মনে পড়ে সেই দিনের কথা।’

শেখ হাসিনা বলেন, “এই ময়দানে জাতির পিতা সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যে ভাষণে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেই ভাষণেই তিনি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে। এমনকি জাতির পিতা জানতেন এই ভাষণের পর তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। সেজন্য তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।”

জাতির পিতা এদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিতে চেয়েছিলেন একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজও শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে তিনি দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। ‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। ইনশাআল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০২১ সালের সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হবো।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ দেশ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

গত ১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এই স্বীকৃতি উদযাপনের অংশ হিসেবেই শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এই স্বীকৃতি উদযাপনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদযাপন করা হয়। এ ছাড়া নাগরিক কমিটির ব্যানারে গত ১৮ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ আয়োজিত হয়।

শনিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতির উদযাপন শুরু হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেজার শোর মাধ্যমে শেষ হবে আনন্দ শোভাযাত্রার এই সমাবেশ।