মঙ্গলবার, ২৮শে নভেম্বর, ২০১৭ ইং ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সিএনজি অটোরিকশা অ্যাপে, ঘোষণা শিগগিরই

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২৫, ২০১৭
news-image

---

নিউজ ডেস্ক : সিএনজি অটোরিক্সাঅ্যাপভিত্তিক সেবার বিরোধিতা নয়, অ্যাপেই সিএনজি অটোরিকশা চালাবেন চালকরা। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার শিখছেন তারা। আর দেড় মাস পর সিএনজি অটোরিকশা মিলবে উবার, পাঠাও, স্যামের মতো রাইড শেয়ার অ্যাপে। অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর বিপাকে পড়া অটোরিকশা চালকদেরও ডিজিটাল নেটওয়ার্কে আনার পথ তৈরি হচ্ছে। হ্যালো সিএনজি রাইড শেয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান নতুন একটি অ্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে যাত্রীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অটোরিকশা ডাকতে পারবেন। স্যাম নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানও তাদের অ্যাপে অটোরিকশা ভাড়া করার সুযোগ রেখেছে।

যাত্রীদের চাহিদা মতো গন্তব্যে না যাওয়া এবং বাড়তি ভাড়া নেয়ায় সমালোচিত অটোরিকশা চালকরা সম্প্রতি পুরনো অটোরিকশার বদলে নতুন বাহন বরাদ্দসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই আট দফায় অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিও ছিল।

কিন্তু অটোরিকশা অ্যাপের আওতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল এখন আগ্রহের কথা বলছেন।

অ্যাপনির্ভর ট্যাক্সি ও মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের বিরোধিতা করে ধর্মঘট ডাকায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন তারা। অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তাদের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।

অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা ব্যবহারকারীদের কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকার অনেক বাসিন্দাও ফেসবুকে একই আহ্বান জানাচ্ছেন। অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি ও বাড়তি টাকা নেয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে।

বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে চালকদের মধ্যে নতুন অটোরিকশা বরাদ্দ এবং অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধ করাসহ আট দফা দাবিতে ধর্মঘটসহ এক মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবেন অটোরিকশা চালকরা। তারপরও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে তাদের লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে। কিন্তু এ ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছেন অনেকে। অনেকে আবার অটোরিকশা ব্যবহার না করার ঘোষণাও দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তরুণ কথাসাহিত্যিক খালিদ মারুফ ফেসবুকে লিখেছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ধর্মঘটের প্রতি মানুষের এতটুকুও সহানুভূতি নেই বলে মনে হচ্ছে। তার ওই পোস্টের কমেন্টে ইস্কান্দার মির্জা নামে একজন লিখেছেন, জনগণ লাল কার্ড দিছে। কবির মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম লিখেছেন, না থাকাটা খুব বেশি অযৌক্তিক নয়। অটোরিকশা চালক-মালিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সৌমিক অধিপতি লিখেছেন, এসব যেদিন উঠে যাবে সেদিন অনেকেই মুক্তি পাবে। চোরারা আর কত কাল ফুলে ফুলে লাল হবে। অটোরিকশা শ্রমিকরা মূলত অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বলে মনে করছেন মহাখালীর বাসিন্দা এমদাদুল হক।

তবে এটি ভুল প্রচার হয়েছে দাবি করে দুলাল বলেন, অ্যাপনির্ভর সেবার বিরোধিতা করিনি। দাবি ছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অপসারণ ও অনুমোাদন ছাড়া যেন অ্যাপনির্ভর এসব সেবা না চলে। আমরা নিজেরাও অ্যাপে চলে যাচ্ছি। এ সময় দুলাল জানান, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মিটারে চলা সব সিএনজি অটোরিকশা অ্যাপের মাধ্যমে চলার বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অ্যাপে চলে এলে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে দরাদরি বন্ধ হবে বলেও মনে করেন সিএনজি চালকদের সংগঠনের এ নেতা। অটোরিকশার জন্য অ্যাপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ জানিয়ে হ্যালো সিএনজির প্রতিনিধি এএসএম জামাল বলেন, চালক ও যাত্রীদের জন্য যে অ্যাপ, সেটি চলে এসেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেব। এটা ডিসেম্বরের শেষের দিকেই চলে আসবে। জামাল জানান, এই অ্যাপ চালুর বিষয়ে তারা পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে আলোচনায় বসছেন।

ইতোমধ্যে অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নেতাদের সঙ্গে মোটামুটি কথা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চালকদের ওপরও আমরা জরিপ করছি। রাইড শেয়ারিং সেবার গ্রোতে অটোরিকশা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্যই এ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এএসএম জামাল। তিনি বলেন, অটোরিকশায় যাত্রী অনেক কমে গেছে। একটি অটোরিকশা এক থেকে দেড় ঘণ্টা বসে থাকছে। সারাদিন গাড়ি চালানোর পর যে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা তা তারা ঠিকমতো পাচ্ছে না। ফলে ঠিকমতো জমাও দিতে পারছে না। সব মিলিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। সিএনজি অটোরিকশার সিস্টেমটাকে টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এ উদ্যোগ। জামাল বলেন, হ্যালো সিএনজি অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নিলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে খরচ কিছুটা বাড়বে। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকাই থাকবে। তবে পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকার পরিবর্তে ১৩ টাকা করে গুনতে হবে যাত্রীদের। ফলে প্রতিটি রাইডে যাত্রীদের ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দিতে হবে। আমরা যে সুবিধাটা দেব এটার জন্য কিছুটা চার্জ তো করতেই হবে। কারণ ঘরে বসেই এখন অটোরিকশা ডাকতে পারছেন।

অটোরিকশা ঠিক করার জন্য রাস্তায় যেতে হচ্ছে না, অতিরিক্ত সময় লাগছে না। হ্যালো সিএনজি অ্যাপটি ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হলেও অটোরিকশা চালকদের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষ না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে জানান জামাল। তিনি বলেন, অনেকের কাছেই স্মার্টফোন নেই। যাদের আছে, তারাও এর ফাংশন ঠিকমতো বোঝেন না। এ জন্য চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। ইতোমধ্যে আমরা দেড়শ’ চালককে যুক্ত করেছি।

আরেকটি অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘শেয়ার অ্যা মোটরসাইকেল’ বা স্যামও তাদের অ্যাপে অটোরিকশায় রাইড নেয়ার সুযোগ রেখেছে বলে জানিয়েছেন ডাটাভক্সসেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ কাসেম।

তিনি বলেন, অটোরিকশার অপশন আমাদের অ্যাপে আগেই রেখেছিলাম। আমরা চালকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছিলাম। তবে নীতিমালায় অটোরিকশাকে না রাখায় আর এটা নিয়ে কাজ করিনি।

প্রস্তাবিত রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় অটোরিকশার বিষয়টি রাখা হয়নি। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে তা ভেবে দেখার সুযোগ আছে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, আমরা তো কিছু করতে পারব না। আমাদের নির্দেশনা দিলে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করতে পারি। সেক্ষেত্রে সচিব বরাবর দরখাস্ত দিলে আমাদের যদি বলে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে, আমরা করতে পারব।

সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা আমরা শিগগিরই কেবিনেটে পাঠিয়ে দেব। সেখানে তিন চাকার বাহনের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। আর যদি সরকার মনে করে যে সেটা দেয়া দরকার, তাহলে আবার দিয়ে দেব, অসুবিধা কী?