রংপুরের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্র : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে হিন্দু ধর্মীবলম্বীদের বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়ে মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে ওঠার পর গত ১০ নভেম্বর রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ পাওয়া যায়, টিটু রায় নামে একটি আইডি থেকে স্ট্যাটাসটি শেয়ার করা হয়। ১৪ নভেম্বর রংপুরের পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন অভিযুক্ত টিটু রায়কে নীলফামারী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ বুধবার টিটুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে বিচারক দেবাংশু কুমার সরকার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
১০ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশ ও হামলাকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান হাবিব নামে এক যুবক নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।
রংপুরের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘টিটু রায় যে মুঠোফোনটা ব্যবহার করতেন সেটা থেকেই ফেসবুকে আপত্তিকর ছবিসহ কোটেশন এসেছিল। সেটাকে সূত্র ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা জানতে পেরেছি টিটু রায় ৪/৫ বছর ধরে ওই এলাকায় থাকেন না।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। কিন্তু তদন্তের আগে আমরা অফিসিয়ালি কিছু বলছি না। টিটু রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার ফোনটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে দিয়েছি। এই ঘটনায় তার যদি সম্পৃক্ততা থাকে তবে আইন অনুযায়ী তারও বিচার হবে।’
ওই ঘটনার পর পুলিশ ওই এলাকায় গণগ্রেফতার করছে না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক লোক সেখানে গিয়েছিল। আমাদের পুলিশ গ্রামকে রক্ষা করতে পেরেছিল। ভিডিও ফুটেজ না থাকলেও আমাদের কাছে কিছু ফটো রয়েছে। সেই ফটোতে আমরা যাদের শনাক্ত করতে পারছি, তাদেরই আমরা গ্রেফতার করছি।’
ছবি দেখে অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে এবং গ্রেফতার হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে নিরীহ নিরাপরাধ লোক গ্রেফতার না হন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র চলছে। সেজন্য আমরা নিরীহ লোককে গ্রেফতার করতে পারি না। এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি না। যাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়। যে দায়ী আমরা তাকে চিহ্নিত করছি তাকে ধরছি।’
ধর্মীয় উসকানিদাতাদের সরকার কঠোরভাবে দমন করছে বলেও জানান মন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করার বিষয়ে কতটুকু অগ্রগতি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটার কাজ চলছে। আমরা বলেছিলাম আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সমসংখ্যক প্রতিনিধি এই টিমে থাকবেন। টার্মস অব রেফারেন্স ঠিক হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে।’
নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই নেতা নিখোঁজ হওয়ার ১৮ দিন পর পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে যেটুকু খবর আছে পুলিশ যেদিন নিয়েছে আইনানুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রডিউস করেছে। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল বলেই হয়তো তারা লুকিয়ে বা আত্মগোপন করে ছিল।’
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।