যুগ যুগ জিও তুমি মাওলানা ভাসানী
---
জিয়াউল হক মৃধা : ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর। বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে এক বিষাদময় দিন। সেদিন এক আকস্মিক ঘুর্নিঝরে পতন ঘটল উপমহাদেশের শতাব্দির রাজনীতির বিশাল বটবৃক্ষ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ওরফে চেগা মিয়া। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু, গ্রীসের স্পার্টাকাস, ফ্রান্সের ভলতেয়ার, ইতালির গিরিবন্ডি, আয়ারল্যান্ডের ডি-ভ্যালেরা, মিশরের জগলুল, চীনের ডাঃসানইয়েৎসেন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, ইরানের ডঃ মোসাদ্দেক, ভারতের মহাত্মাগান্ধীর পাশাপাশি আরেক ত্যাগি, নির্মোহ, মহাসংগ্রামী, দেশপ্রেমিক বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তির বলিষ্ট কন্ঠ মজলুম জননেতা ভাসানী। প্রমত্তা যমুনার পাড়ের সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের হাজী শরাফত আলী খান ও মোছাম্মত মজিরূন বিবির পুত্র মাওলানা ভাসানী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত ছিলেননা, যার বড়জোর কোন শহরের মসজিদের পেশ ইমাম বা কোন মাদ্রাসার মাঝারি গোছের শিক্ষক হওয়ার কথা সে ব্যক্তি আলোড়ন সৃষ্টি করলো বিশ্ব রাজনীতিতে ,কাপিয়ে দিয়েছিল বৃটিশ সা¤্র্রাজ্যের ভিত। পাকিস্তানের সকল শক্তিমান শাসকই তাঁর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্থ ছিল। এমন ঘটনা বিশ্বে বিরল। ১৮৮০ সালে মাওলানা ভাসানীর জন্ম। মাত্র তের বছর বয়সেই ১৮৯৩ সালে পিতামাতা হারা আবদুল হামিদ খান পিতৃব্যের সামন্তবাদী আচরনের প্রতিবাদে গৃহ ত্যাগ করেন এবং কৈশোর বয়সেই পীরের সাথে আসাম গমন করেন। অসীম সাহসী বিপ্লবী মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন ভারত ভূখন্ড, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যৌবনের সোনালী দিনে জীবনের ঝুকি নিয়ে ১৯০৩ সালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে যোগ দেন।অতঃপর ১৯১৪সালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও হঠকারিতা উপলব্দি করতে পেরে এ আন্দোলনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং ১৯১৯ সালে তিনি কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন । রাউলাট আইনের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশ গ্রহন করা কারনে জীবনের প্রথম কারাবরন করেন।কারাগার হতে মুক্তি পেয়ে জমিদারদের বিরোদ্ধে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। স্বাধীন ভূখন্ডের স্বপ্ন নিয়ে জীবন ব্যাপি ছুঠে চলেছেন এক দল হতে অন্য দলে। তাঁর স্বপ্ন ছিল স্বাধীন ভারত,স্বাধীন বাংলা ও আসাম। স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরনে ১৯২৪ সালে যোগ দেন কৃষক প্রজা আন্দোলনে।
১৯২৪ সালে আসামের ভাসানচরে কৃষক সম্মেলন করেন। তার নাম হয় মাওলানা ভাসানী। ভাসানচর চিরদিনের মত মওলানা ভাসানীর নামের সাথে যুক্ত হয়ে বংশ পরম্পরায় ভাসানী হয়ে থাকবে। ভাসানচরের সম্মেলন মাওলানা আবদুল হামিদ খানকে ভাসানী পরিচিতি দিলো বিশ্ব সভায়।১৯৩০ সালে তিনি মুসলিমলীগে যোগদেন। ১৯৩২ সালে তাঁর জন্মভূমি সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলা প্রান্তরে কৃষক প্রজা সম্মেলন বৃটিশ রাজ শক্তির তাবেদার অত্যাচারী জমিদার মহাজনদের পতনের ঘন্টা বাজিয়ে দেয়।অবহেলিত কৃষকদের অধিকার সচেতন করার লক্ষে বিভিন্নজায়গায় কৃষক সম্মেলন করার কারণে জমিদাররা ভাসানীকে নিজ এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে। পূর্ববাংলা ও আসামে বসবাসরত বাঙ্গালী মুসলমান কৃষকদের বিতাড়িত করার জন্য সরকার ১৯৩৭ সালে লাইনপ্রথা নামে এক কুখ্যাত আইন জারি করে।তখন মাওলানা ভাসানী লাঙল যার জমি তার স্লোগান নিয়ে কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। সরকার বাধ্য হয়ে লাইন প্রথা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। ১৯৩০ সালে মুসলিমলীগে যোগদান, ১৯৩৯ সালে টাঙ্গাইলের সন্তুষের সম্মেলন, ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক লাহোর সম্মেলনে যোগদান সবকিছুর পেছনেই একটি স্বাধীন ভূখন্ডের চিন্তা-চেতনা। দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য মওলানা ভাসানীর চিত্ত ছিল অস্থির।তাই কখনো অসাম্প্রদায়িক দলে, কখনো সাম্প্রদায়িক দলে কখনো বা সন্ত্রাসবাদী দলে কাজ করতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করেননি। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার নেশায়,মুক্তির নেশায় বিভোর। তাই দ্বিজাতি তত্¦েরভিত্তিতে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সময় মাওলানা ভাসানী সিলেটকে পূর্বপাকিস্তানের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য রেফারেন্ডাম মুসলিম লীগের পক্ষে অকুতোভয়ে কাজ করেছেন। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার শিখা জ্বালিয়ে হিন্দু- মুসলমান দুই জনগোষ্ঠীর জন্য হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান নামক দুটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে ভারতকে বিভক্ত করে বৃটিশরা ভারত হতে রাজক্ষমতা গূটিয়ে নেয়। স্বাধীনতার পর মাওলানা ভাসানী উপলব্ধি করতে পারলেন-ধর্মের নামে দেশ বিভক্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে দেশের শাসনভার ন্যস্ত রয়েছে সা¤্রাজ্যবাদীদের হাতের ক্রীড়ানকদের হাতে।
ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমাজনীতি,অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বৈষম্য সৃষ্টি হলো।শিশুরাষ্ট্র পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি ক্ষমতা নিয়েই পূর্বপাকিস্তানের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর ভাষা তথা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বিলোপের অপচেষ্ঠায় লিপ্ত হয় ও পূর্বপাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিনত করে। যে কণ্ঠ বৃটিশ রাজত্ব অবসানের সংগ্রামে সোচ্চার ছিলেন আবার স্বাধীন পাকিস্তানের স্বৈর শাসনের বিরোদ্ধে গর্জে ওঠে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ভাসানী জন্মদিলেন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল পূর্বপাকিস্তানের আওয়ামীমুসলিমলীগ এবং তাঁর নেতৃত্বে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা আগমনে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম ভোখামিছিল প্রবল শক্তিধর মুসলিমলীগ সরকারের বিরোদ্ধে প্রথম প্রত্যক্ষ গণবিস্ফোরন রূপে চিহিৃত হয়। ১৯৫০ সালে পাক সরকার মওলানা ভাসানীকে কারান্তরিত করলেও কারাগারে ভাসানীর অনশন ধর্মঘটের কারনে তাকে মুক্তিদিতে বাধ্য হয়।আবার ভাষা আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারনে ৫২ সালে গ্রেফতার হয়ে ৫৩ সালে কারামুক্তি পেয়ে ২১দফার ভিত্তিতে মওলানা ভাসানী গঠন করেন যুক্তফ্রন্ট বা হক-ভাসানী -সোহরাওয়ার্দী ফ্রন্ট, যে ফ্রন্ট ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পূর্বপাকিস্তানে মুসলিমলীগ সরকারের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দেয়। ১৯৫৫ সালে মাওলানা ভাসানী আওয়ামীমুসলিমলীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে প্রমান করলেন মাওলানা হলেও তিনি মূলতঃ অসাম্প্রদায়িক। পাকিস্তানের অধিবাসি যেকোন ধর্মাবলম্বী মানুষের অধিকারের প্রশ্নে মুসলিম শব্দটি বিলুপ্ত করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য তিনি পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের দ্বার উন্মোচন করেন। ভাসানী একজন আপোষহীন নেতা ছিলেন বলেই যুক্তফ্রন্ট নিজের সৃষ্ট দল হওয়া সত্ত্বেও আবু হোসেন সরকারের আমলে তীব্র খাদ্য ঘাটতির প্রতিবাদে ২ রা মে হতে ১৮ মে পর্যন্ত অনশন ধর্মঘট পালন করে আন্দোলনে তীব্রতা আনেন। ১৯৫৬ সালের অক্টোবরে পাশ্চাত্যশক্তি ও ইসরাইলের মিশর আক্রমনকে কেন্দ্র করে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর মতবিরোধ চরম আকার ধারন করে।সোহরাওয়ার্দী সা¤্রাজ্যবাদীদের পুতুলে পরিনত হয়ে মিশরে আগ্রাসন সমর্থন করেন। অপরদিকে মাওলানা ভাসানী ৯ অক্টোবর সারাদেশে সুয়েজ দিবসে পূর্নহরতাল ডেকে প্রতিবাদ জানান সা¤্রাজ্যবাদ ও আধিপত্তবাদের বিরোদ্ধে।মওলানা ভাসানী মার্কিন সাহায্য পি,এল ৪৮০ এর বিরোদ্ধেও অবস্থান নেন। তৎকালীন বিশ্বরাজনীতিতে সারা পৃথিবী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে যথা- পুঁজিবাদী বিশ্ব ও সমাজবাদী বিশ্ব। পুঁজিবাদী বিশ্বের নেতৃত্বে ছিল আমেরিকা সহ পশ্চিমা আধিপত্যবাদী দেশগুলো আর সমাজ বাদী বিশ্বের নেতৃত্বে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন।
আদর্শগত ভাবে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় সমাজবাদী বিশ্বও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।তাই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে জড়িতরা রুশপন্থি ও চীনপন্থি দুই নামে চিহিৃত হয়।মওলানা ভাসানী আমেরিকার আধিপত্যবাদের বিরোদ্ধে সোচ্চার থাকায় এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পূর্ববাংলার স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৯৮ ভাগ স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়ে গেছে উক্তির বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভাসানী আওয়ামীলীগ হতে বেরিয়ে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ) নামক সমাজবাদী দলের জন্ম দেন। তখন আওয়ামীলীগ ও মুসলিমলীগ ন্যাপকে নেহেরুএইডেড পার্টি নামে আখ্যায়িত করতো এবং ভাসানীকে ভারতের দালাল বলে ডাকতো।পরবর্তীতে ন্যাপ হয়ে ওঠে পূর্বপাকিস্থানের গনতান্ত্রিক আন্দোলনের নিয়ামক শক্তি এবং এদেশের সকল বামপন্থি তথা সমাজবাদী ব্যক্তি ও সংঠনের আশ্রয়স্থল।১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষনা করলে পাকিস্থানের ক্ষুব্ধ শাসক স্বৈরাচারী আয়ুবখান বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামক রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে প্রেরন করেন।বঙ্গবন্ধু জেলে তখন মওলানা ভাসানীই একমাত্র জাতীয় নেতা যিনি বাঙ্গালী জাতির নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।আমি আগেই বলেছি সমাজ তান্ত্রিক বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় মওলানা ভাসানী চীনের পক্ষেই অবস্থান নেন এবং আয়ুবখানের শাসনামলে পাকিস্থানের সাথে চীনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্থাপনে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন এবং চীন সরকারের আমন্ত্রনে চীন সফর করেন।চীনের সমাজতান্ত্রিক নেতা চীন বিপ্লবের মহানায়ক মা-ও-সেতুং এর সাথে ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বা প্রিমিয়ার চু-এন লাইয়ের সাথে বৈঠক করেন।প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে- মাও সেতুং এর সাথে সাক্ষাতকালে মাওসেতুং মওলানা ভাসানীকে কালমার্ক্সের ডাক্সক্যাপিটাল বইটি ভাল করে পড়ার উপদেশ দেন আর মাওলানা ভাসানী মাওসেতুংকে মহাগ্রন্থ কোরআন পড়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্মবর পল্টন ময়দাদের বিশাল জনসমাবেশে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধু সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবি জানান এবং ঘোষনা করলেন- যেকোন উপায়ে প্রয়োজন হলে জেল ভেঙ্গে শেখ মুজিব সহ রাজবন্দীদের মুক্ত করতে হবে। শেখ মুজিবের ৬ দফা ও ছাত্র জনতার ১১ দফা দাবীর প্রতি সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনের মুখে বাঙ্গালীর দাবি মেনে নিতে পাক সরকারকে বাধ্য করেন। চরম গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২৪ মার্চ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এক বিশেষ ঘোষনার মধ্য দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারসহ বাঙ্গালিদের সমস্ত দাবি মেনে নেন। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্থানে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থ দুর্গত এলাকা হিসাবে রিলিফ দেওয়ার নামে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিপুল সংখ্যক মার্কিন ও বৃটিশ সৈন্যের ঘাঁটি স্থাপন করা প্রসঙ্গে মওলানা ভাসানী বলেন-সশস্ত্র হয়ে সেবা করা যায় না-যুদ্ধ করা যায়।তিনি মার্কিন ও বৃটেন সেনাবাহিনীকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বপাকিস্তানের মাটি থেকে বিদায় নেওয়ার নির্দেশ দেন।অন্যথায় মার্কিন ও বৃটিশ দুতাবাস জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।১৯৭০সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষের কৃষক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম,যদিও বয়সে কিশোর ছিলাম।৭০ সালের নির্বাচন প্রাক্কালে ভোটের আগে ভাত চাই দাবীতে সোচ্চার ছিলেন। মাওলানা ভাসানী মূলত আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিয্্্্্্্্্দ্ধু চলাকালে বাঙ্গালী শরনার্থীদের সাথে মাওলানা ভাসানীও চলে যান ভারতে।ভারত সরকার গভীর শ্রদ্ধা জানালেন মাওলানা ভাসানীকে। তিনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।মহানমুক্তি সংগ্রামে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন।১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে ভারত থেকে দেশে ফিরে এলেন। দেশে ফিরে সাপ্তাহিক হক কথা পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সত্যকথা প্রচারের সূচনা করলে স্বার্থবাদীদের টনাক নড়ে ।
মাওলানা ভাসানী চিরদিনই স্পষ্টবাদী ছিলেন এবং জীবনে কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে শিখেননি। মাওলানা ভাসানী শুধু একজন রাজনীতিবীদই ছিলেননা,তিনি একজন আধ্যাতিক পীর ছিলেন।তারঁ ১৪ লক্ষ শিষ্য ছিল।ভারত ও পৃথিবীর অনেক দেশের বহু জ্ঞানী গুণী লোকের সঙ্গে ভাসানীর ঘনিষ্টতা ছিল।১৯৭৬ সালের ১৬ মে পঁচানব্বই বছর বয়সে ১৯ মাইল দীর্ঘ লংমার্চের নেতৃত্ব দেন ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের বিরোদ্ধে সোচ্চার হয় । সত্যিই তিনি একজন অসম সাহসী আপোষহীন সংগ্রামী মজলুম জননেতা। আজ (১৭ নভেম্বর ) তাঁর মৃত্যুর দিন।১৯৭৬ সালের এই দিনে তাঁর মৃত্যুর ফলে শেষ হলো এদেশের রাজনীতির একটি সোনালী অধ্যায়। আজ তিনি আমাদের মাঝে বেচে নেই, তবু তিনি বাঙ্গালী হৃদয়ে অমর-অক্ষয় হয়ে আছেন তাঁর কর্মের মধ্যে, কীর্তির মধ্যে। পরিশেষে বলতে চাই-যুগ যুগ জিও তুমি-মাওলানা ভাসানী।
লেখকঃ জিয়াউল হক মৃধা
জাতীয় সংসদ সদস্য