রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুচি দ্বিচারিতা করছেন: নাসিম
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি দ্বিচারিতা করছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চৌদ্দ দলের এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সুচির অভিযোগের জবাবে নাসিম বলেন, প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তার দ্বিচারিতা লক্ষ্য করছি। সুচি যে কথা বলেছেন অসত্য বলেছেন। বরং তিনি আন্তরিক হলে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে। একটু আন্তরিক হলেই সম্ভব, এটা তহার উপরে নির্ভর করছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে গত তিন মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, জাতিসংঘ, ইউরেপীয় ইউনিয়নসহ সারাবিশ্বকে জাগ্রত করেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মায়ানমারের উপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন। এই চাপ সৃষ্টি করার জন্যই আজকে মায়ানমার থেকে প্রতিনিধি এসেছে, মন্ত্রী এসেছেন। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা ও চাপ দেয়ার কারণেই আজকে মায়ানমার বাধ্য হচ্ছে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে।
তিনি বলেন, তিনমাস ধরে আমারা বিভিন্ন খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছেন। আমরা সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি, এটা বিদেশীরা সহ সবাই প্রশংসা করেছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর নিয়ে যাওয়ার সমালোচনা করে চৌদ্দ দলের মুখপাত্র বলেন, হঠাৎ করে তিন মাস পরে উনি(খালেদা জিয়া) ঘুম থেকে উঠলেন। তিন মাস ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি, লন্ডনে ঘুমিয়ে ছিলেন। আজকে জেগে উঠে উনি রোর্ড মার্চের নামে, গাড়ি বহরের নামে সেখানে গেলেন। যেখানে প্লেনে গিয়ে কক্সবাজরে সাহায্য কারা যেত সেখানে কোটি টাকা খরচ করে, গাড়ি নিয়ে নাটক করলেন তিনি।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যু সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদার সমালোচনাকে মিথ্যা দাবি করে নাসিম বলেন, এই যে নাটক করলেন তাতে লাভ হলো কি? মানবিক কারণে যাননি তিনি, গিয়েছেন পলিটিক্যাল ইস্যু নিয়ে। একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য সেখানে গিয়েছেন। আর গিয়ে অভিযোগ করলেন শেখ সরকার নাকি কিছুই করেনি। এত বড় মিথ্যাচার তিনি করতে পারলেন? আমরা আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। একজন অন্ধ নেত্রী আছে বাংলাদেশে তার প্রমান হলো এই মিথ্যাচারের মাধ্যমে। আমরা ঘৃণা ভরে তার এই অভিযোগকে প্রত্যাক্ষাণ করছি।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার বাঙালি জাতি উল্লসিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও আজকে ইউনেস্কোর মত একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের সেই ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমগ্র বাঙালি জাতি আজকে উল্লাসিত। আজকে চৌদ্দ দল অত্যন্ত আনন্দি ও কৃতজ্ঞ ইউনেস্কোর কাছে যে তারা দেরিতে হলেও এই ঐতিহাসিক অবিস্মরনীয় ভাষণকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
৭ মার্চের ভাষণ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার দাবি করে তিনি বলেন, চৌদ্দ দলের দাবি এই ভাষণটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সারা দুনিয়ার প্রচার কারতে হবে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি ইয়াঙ্গুন থেকে মায়ানমার সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মিয়ানমার এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকলেও ফেরানোর শর্ত কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ টালবাহানা করছে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুখপাত্র জ তেয় বলেছেন, আমাদের সরকার অনেক আগেই ঘোষণা করেছে আমরা (এই শরণার্থীদের) যে কোনও সময় ফেরত নিতে রাজি। কিন্তু এটা নিয়ে দুদেশের মধ্যে কী সমঝোতা হবে বাংলাদেশ এখনও সেটাই ভেবে চলেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে, সে জন্যই তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ঢিলেমি করছে বলেও দাবি করেছে মায়ানমার।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি এবং বেসারমরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।