g রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের প্রস্তাব | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৭ ইং ২০শে কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের প্রস্তাব

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২, ২০১৭
news-image

---

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় (২ অক্টোবর) রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে একটি খসড়া প্রস্তাব হস্তান্তর করে ঢাকা। সম্প্রতি ওই প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে মিয়ানমার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। এখন আমরা সেটি পর্যালোচনা করে আমাদের প্রস্তাব দেব। এভাবেই দুই পক্ষের প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাবের মাধ্যমে আলোচনা করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে।’

সরকারের এই কর্মর্কতা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব পাঠানোর তিন সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমার ফিরতি প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’ মিয়ানমারের প্রস্তাবে কী আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনও আলোচনায় দুই পক্ষ সবকিছু মেনে নেবে, বিষয়টা এমন নয়। আমাদের কিছু প্রস্তাবে তারা সম্মত হয়েছে, কিছু প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়েছে। এছাড়া কিছু নতুন প্রস্তাবও আছে।’

সে সব প্রস্তাবে মিয়ানমারের অসম্মতি
বাংলাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে, তাদের সবাইকে ফেরত নিতে হবে। এই প্রসঙ্গে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘মিয়ানমারের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরের আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা কোনও প্রতিশ্রুতি দেবে না।’ তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। এছাড়া আগে থেকেই প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।’

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের আরেকটি ধারায় বলা হয়েছিল, ফেরত পাঠানোর জন্য ১৯৯২ সালের নির্ধারিত মানদণ্ড এখানে প্রযোজ্য হবে না। এ জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রস্তাবের বিপরীতে তারা একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে, ১৯৯২ সালের সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে ২০০০ সালে আরেকটি সমঝোতা হয়েছিল অল্প কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই করার জন্য। সেটিকে তারা মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।’

১৯৯২ সালে যে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছিল, তারমধ্যে ৯ শতাংশ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ছিল জটিল। এই জটিলতার একাধিক কারণ ছিল। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম, বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিয়ে। এ জটিলতা নিরসনের জন্য ২০০০ সালে নতুন একটি সমঝোতা হয়, যেটিকে ভিত্তি ধরতে চায় মিয়ানমার।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সবাই চায়, আগে সহজ জিনিসটি সমাধান করতে, কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিপরীত। ৯০ শতাংশ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছায়ের চেয়ে যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল, সেটি আগে করতে চায় মিয়ানমার। তারা এই প্রস্তাবই তারা দিয়েছে। এটি নিয়ে পর্যালোচনা করে আমাদের প্রস্তাব দেব।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রস্তাবে ছিল রোহিঙ্গারা তাদের গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। এ প্রস্তাবের বিপরীতে মিয়ানমার প্রস্তাব করেছে, তারা তাদের গৃহে নয়, এর কাছাকাছি একটি জায়গায় প্রত্যাবর্তন করতে পারবে।

এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। কারণ তাদের অধিকাংশের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের জন্য নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাংলাদেশের প্রস্তাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দফা হলো, জাতিসংঘকে রোহিঙ্গা ফেরত-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে মিযানমারের আপত্তি জানিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘টিন্ট সোয়ে যখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তখনই এ বিষয়ে তার আপত্তির কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালের সমঝোতার অধীনে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা সঙ্গে ১৯৯৩ সালে একটি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে ওই সংস্থা রোহিঙ্গাদের অনুমোদন করতো। এখন তারা যদি এই প্রক্রিয়ার মধ্যে না থাকে, তবে জটিলতা তৈরি হতে পারে।’

দুই দেশের মধ্যে তথ্যের মধ্যে অমিল হলে, যৌথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব ছিল বাংলাদেশের। তবে মিয়ানমার এ প্রস্তাবেও রাজি হয়নি। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৯২ সালের সমঝোতা করতে ছয় মাসের বেশি সময় লেগেছিল। এখন আলোচনার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। আলোচনার এ প্রক্রিয়ায় প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব চলতে থাকবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ কতটুকু বের করে নিয়ে আসতে পারবে, এটি নির্ভর করবে, দর কষাকষির দক্ষতার ওপর।’

মিয়ানমারের মিথ্যাচার
গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ গড়িমসি করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ‘একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায় ওই মিয়ানমার কর্মকর্তার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি, সেখানে এ ধরনের মন্তব্য দেখে প্রতীয়মান হয়, কূটনৈতিক আলোচনা সম্পর্কে তার কোনও ধারণা নেই। আর যদিও থেকে থাকে, তবে তিনি বিষয়টি টুইস্ট করছেন।’

এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ২৪ মে ও ২২ সেপ্টেম্বর দু’টি অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। এরপর ২ অক্টোবর আরেকটি পরিবর্তিত অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়। এর ফিরতি প্রস্তাব মিয়ানমার ২০ অক্টোবর দিয়েছে, যেটি বাংলাদেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।’

এছাড়া বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানায় দূতাবাস। সেই বৈঠকে ঠিক হয় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হবে, যার অধীনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হবে।

অং সান সু চির রাখাইন সফর
অং সান সু চি বর্তমানে রাখাইনে সফর করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেকটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘এটি ভালো খবর। তবে আরও আগে হলে বেশি খুশি হতাম। কারণ এর মাধ্যমে এ সমস্যার রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘২০১২, ২০১৪ বা ২০১৬ সালের সংঘর্ষের পর কখনোই সু চি রাখাইন সফর করেননি। সেই অর্থে এটি তার প্রথম সংঘর্ষপূর্ণ রাখাইনে প্রথম সফর। সেটি হয়েছে দুই মাস পরেই। আমরা দেখি, সেখানে তিনি কী বলেন এবং এ সমস্যা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেন।’ বাংলা ট্রিবিউন

এ জাতীয় আরও খবর