সংলাপ ইসির আইওয়াশ : ফখরুল
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যে সংলাপ করছে, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইসি দুই মাস ধরে যে সংলাপ করেছে, সেটি একটা লোক দেখানো আইওয়াশ। সংলাপে অংশ নেওয়া সবাই বলেছে যে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন জাতি তাকিয়ে আছে ইসি কী করে?’
‘কিন্তু ইসি কিছুই করতে পারবে না। কারণ, সরকারের বাইরে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করার শক্তি নেই। এরপরও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে কি না, যাতে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।
সভায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি রাস্তা বের করুন, যাতে সকলের নিকট একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায় এবং মানুষ ভোট দিতে পারে। ’
‘এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে, পায়ের নিচে মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে চায়। কিন্তু এই দেশের ইতিহাস আছে, যাদের ওপর ভর করে ক্ষমতা চালাচ্ছেন, জনগণ জেগে উঠলে সময় এলে এরাও পাশে থাকবে না।’
নেতিবাচক বিষয় বাদ দিয়ে পজিটিভ রাজনীতি করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিন। আমরা বলি না, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মামলার মাধ্যমে তাদের সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। সব মামলাকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে সাজা দিতে চায়। মামলা দিয়েই তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে।
সরকারের ‘কৌশল’ তছনছ করে দিতে না পারলে জাতীয়তাবাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলেও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এ সরকার মানুষকে ভয় পায়। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারেক রহমানকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। সে জন্য তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এই সরকার সম্পূর্ণরূপে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। এ জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকতে অপকৌশল নিতে হচ্ছে। এ জন্য মামলার অপকৌশল নিয়েছে তারা।’
‘সরকার খালেদা জিয়ার মামলা শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেলেও হাইকোর্ট থেকে সাজা দিয়েছেন। বিএনপির এমন কোনো নেতা নেই, যাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা নেই। এম কে আনোয়ার চলে গেলেন শুধু মামলার কারণে। শেষ পর্যায়ে এসে তাঁকে এমন মামলা দিল যে তিনি আর নিতে পারলেন না’, বলেন বিএনপির এই নেতা।
সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা, সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বলে আর মেগা প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে মেগা চুরি। হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট করবে আর হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেবে। এই যে উড়াল সেতু, কিছুদিন পরে দেখবেন তা ভাঙতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যায় না, এত খারাপ অবস্থা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বাজারে এমন কোনো সবজি নেই, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আছে। গ্যাস, পানি বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছেন। জনগণের পকেট খালি করছেন আর নিজেদের পকেট ভরছেন। ইতিহাস বলে মানুষ দীর্ঘদিন এসব সহ্য করবে না। তখন কামান দিয়ে কিছু হবে না।
নগর বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি ইউনুস মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, তানভীর আহমেদ রবিন, শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতু করিম বাদরু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু প্রমুখ।