চলতি মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ৩৫০০ রোহিঙ্গা : এএফপি
---
চলতি মাসে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন অন্তত ৩৫০০ রোহিঙ্গা মুসলিম। স্থানীয় কমিউনিটি নেতাদের উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থাএএফপি এই খবর জানিয়েছে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কথিত মুসলিম বিদ্রোহী এবং বিচ্ছিন্নতাকামীদের নির্মূল করতে সার্জিক্যাল অপারেশন শুরুর ঘোষণা দিয়ে সেনা উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করে। এএফপি বলছে, তখন থেকে নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা চলতি মাসের ১২ তারিখ জানিয়েছিল, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে নতুন করে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার সেনা-গণতান্ত্রিক ডিফ্যাক্টো সরকার। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছিল, নতুন করে অভিযান চালানোর স্বার্থে সেখানে মোতায়েনকৃত সেনার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ১৭ আগস্ট সাউথ এশিয়া মনিটর-এর প্রতিবেদনে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সেনা অভিযান শুরুর কথা জানানো হয়।
রোহিঙ্গা নেতারা বুধবার এএফপিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি নতুন উত্তেজনার পর ৩,৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দুই দেশকে বিভক্ত করা নাফ নদীর কাছাকাছি কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আলাদা কোনও জাতিগোষ্ঠীই মনে করে না। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত ওই জনগোষ্ঠীকে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে দায়িত্ব অস্বীকার করতে চায়। তবে রোহিঙ্গারা নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক বলেই জানে। নাগরিকত্বকে তারা অধিকার হিসেবেই দেখে। তবে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে গিয়েও তারা অজ্ঞাত হামলার শিকার হচ্ছেন বলে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্ত ও নৌ বাহিনী উচ্ছেদ হওয়া হতভাগ্য ওই মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। চলতি সপ্তাহেই পালিয়ে আসতে চাওয়া এমন ৩১ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
নাফ নদীতে বিভক্ত সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারে প্রবেশ করলেই সবথেকে কাছাকাছি বালুখালি শিবির। আব্দুল খালেক নামের একজন রোহিঙ্গা নেতা এএফপিকে বলেন ‘কেবল বালুখালি শিবিরেই রাখাইনের গ্রামগুলো থেকে ৩০০০ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।’ অপর এক শরণার্থী শিবিরে থাকা কামাল হোসেন নামের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ রোহিঙ্গা এএফপিকে বলেন, ১১ দিনে অন্তত ৭০০ রোহিঙ্গা পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সামরিক বাহিনীর অক্টোবর অভিযানে রাখাইনে পরিকল্পিত ধর্ষণ, খুন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার।এমন সময় সামরিক অভিযান শুরু হলো। গত বছর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর সামরিক বাহিনী ওই অভিযান চালিয়েছিল। অক্টোবরের সেই দমন অভিযানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার খবরে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-ধর্ষণ আর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ হাজির হয়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় নিপীড়নের শিকার প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা। পরে ইউএনএইচসিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের যথাযথ সহায়তা না দিলে তারা আবারও নিপীড়িত হতে পারে। নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকার অবশ্য রোহিঙ্গা নিপীড়নের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
অক্টোবরের অভিযান সত্ত্বেও ওই অঞ্চলে থেমে থেমে সহিংসতা চলছে। সরকারের দালাল সন্দেহে গ্রামে ডজন খানেক খুন এবং অপহরণের জন্য বিদ্রোহীদের অভিযানের অজুহাত হিসেবে হাজির করেছে মিয়ানমার।