g আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভে কুরবানি | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ২৬শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ১১ই ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভে কুরবানি

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ২৪, ২০১৭

---

কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম। কোরবানিসহ আমাদের সকল ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। কোরবানি ঈমানদার মুসলমানকে আল্লাহর নির্দেশ পালনে ত্যাগ স্বীকার এবং ধর্মীয় বিধি বিধানে কোরআন হাদীসের আদেশ নিষেধের নিকট আত্মসর্মাপণের বাস্তব শিক্ষা দেয়। ইসলাম ধর্মের প্রতিটি ইবাদত পালনের মধ্যে ইবাদত পালনকারীর জন্য রয়েছে কিছু অন্তর্নিহিত শিক্ষা। ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, শিক্ষার আলোকে জীবন-যাপন, শিক্ষাকে কাজে লাগানো ঈমানের দাবি এবং ইবাদতেরও দাবি। কোরবানি দেয়া আল্লাহর আদেশ। কোরবানি দাতার জন্য রয়েছে কিছু শিক্ষা। সে শিক্ষার প্রতি কোরবানি দাতার নজর দেয়া জরুরি। আমরা কোরবানি দিলেও কোরবানির শিক্ষার ব্যাপারে কি নজর দেই? আমরা কোরবানির আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে বুঝে তা থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করি? গতানুগতিক ইবাদত পালনের মধ্যে, ঈদুল আজহার কোরবানি দেয়ার মধ্যে ধর্ম পালনের আমেজ পাওয়া যেতে পারে? জাহির করা যেতে পারে নিজেকে মুসলমান হিসেবে, কিন্তু এতে কি প্রকৃত ধার্মিক হওয়া যাবে? পাওয়া যাবে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি? পাওয়া যাবে কি পরকালীন মুক্তি? নতুন কোরবানি দাতার নাম না হয় বাদই দিলাম। আমরা যারা পুরনো কোরবানিদাতা, অনেক বছর ধরে কোরবানি দিয়ে আসছি, আমাদের সকলকে কোরবানির শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ সূরা হাজে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর কাছে তাদের (কোরবানির পশুর) গোশত আর রক্ত পৌঁছে না বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে” অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা এবং আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে সে শিশুকে (ইসমাইল আঃ) কে মুক্ত করলাম” (সূরা আস্ সাফফাত : ১০৬ ও ১০৭)। উক্ত আয়াতদ্বয়ে কোরবানিকারীর জন্য রয়েছে অনুপম শিক্ষা। এ শিক্ষার অন্যতম হচ্ছে পশুর গলায় ছুরি চালানোর পাশাপাশি কোরবানিকারী নিজের আমল-আখলাক, চলনে-বলনে , জীবন যাপনে ধর্ম বিবজির্ত যে ধ্যান-ধারণা আছে তার গলায়ও ছুরি চালাতে হবে। তথা কোরআন-হাদীসে নিষেধকৃত বিষয়গুলো নিজের জীবন থেকে বাদ দিবে অর্থাৎ নির্মূল করবে এটাই কোরবানির শিক্ষা।

কোরবানির বাস্তব প্রতিফলন ঘটে হযরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ:) এর মাধ্যমে। বহু আরাধনার পর হযরত ইবরাহিম (আ:) ছিয়াশি বছর বয়সে পুত্র ইসমাইলের জন্ম হয়। আল্লাহ তায়ালা বহুবার ইবরাহিম (আ:) কে পরীক্ষা করেছেন। সর্বশেষ পরীক্ষা করেন তিনি ইসমাইলকে কোরবানির নির্দেশ দিয়ে। ইসমাইল (আ:) এর বয়স যখন সাত বছর তখন আল্লাহ ইবরাহিম (আ:) কে স্বপ্নে নির্দেশ দেন তার প্রিয় বস্তুু কোরবানি করার জন্য। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে সকালে হযরত ইবরাহিম (আ:) পাল থেকে কিছু উট কোরবানি করেন। কিন্তু উপর্যুপরি তিন রাত একই স্বপ্ন দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। অবশেষে বুঝতে পারেন যে, পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার নির্দেশ করা হচ্ছে। আল্লাহর নির্দেশ পালনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে প্রথমে গেলেন তিনি বিবি হাজেরার কাছে। হযরত আদম (আ:) এর সময় থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হালাল পশু কোরবানি করার প্রচলন চলে আসছে। যুগে যুগে নবী রাসুল এবং আল্লাহর নেক বান্দারা রবের প্রতি নিজেদের প্রেম-ভালবাসা ও আনুগত্য নিবেদনের জন্য কোরবানি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে “প্রত্যেক জাতির জন্যই আমি কোরবানির ব্যবস্থা রেখেছি।”(সূরা হজ্ব:৩৪)। কিন্তু হযরত ইবরাহিম (আ) এর সময় এসে বিশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কোরবানি আলাদাভাবে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত হয়েছে। ঘটনাটি শুধু ঘটনা ছিল না, তা ছিল আল্লাহর হুকুমের সামনে দুটি প্রাণের নীরব ও শান্ত উৎসর্গ। ঠিক যেমনটি প্রাণদাতা চেয়েছিলেন। তাই প্রেম, ভালবাসা, আনুগত্য ও উৎসর্গের এই অনুপম আর্দশকে আল্লাহ চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন এবং আমাদের জন্য আলোর মিনার হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। আমরা কি পেরেছি প্রেমের সব বন্ধন ছিন্ন করে আল্লাহর প্রেমের বন্ধনকে মজবুত করতে? আজ আমরা সুন্দর সুন্দর পশু জবেহ করেছি, কিন্তু আল্লাহর কাছে যা পৌঁছাবে তা সুন্দর করার চিন্তা করছি না। অথচ গলায় ছুরি চালানোর পরই নেমে এসেছিল জান্নাতি দুম্বা। সুতরাং আমাদেরও আগে নিজেদের গলায় তথা অদৃশ্য সেই পশুটির গলায় ছুরি চালাতে হবে। এরপরই নেমে আসবে আসমানি সাহায্য।