সেই জজ মিয়ার কষ্ট: কাজ দেয় না, বিয়েও দিতে চায় না কেউ!
---
নিউজ ডেস্ক : ২০০৪ সালের বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে সাজানো নাটকের মূল চরিত্র জজ মিয়া। তিনি এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কী করছেন? ২১ আগস্ট এলে অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। তার উত্তরে এভাবেই নিজের কথা বলছিলেন জজ মিয়া। তার কথার অনেকটা জুড়ে না পাওয়ার আক্ষেপ আর কিছুটা প্রত্যাশা। আল্লাহ ভালোই রাখছে। সৌজন্যতার খাতিরে এতটুকু বলে নিজেই যেন আবার নিজের কথা ফিরিয়ে নিলেন। বললেন, খুব বেশি ভালো নাই, ভাই। আপনারা ছাড়া কেউ আর খোঁজ-খবর নেয় না। সরকার আমার জন্য কিছু করেনি। এখন ভাড়ায় গাড়ি চালাই। বাজার খারাপ।
কয় টাকা আর ইনকাম। তার ওপর মা অসুস্থ। ওষুধের ওপরেই বেঁচে আছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা-পয়সা লাগছে। সেই ঘটনার পরে তার জীবনে যে দুর্বিষহ দিন নেমে এসেছিল তা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। বলেন, আমাকে তো আর কেউ সেই জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
আমাকে তো বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় সন্ত্রাসী বানানো হয়েছিল। এখন তো কোনো জায়গায় চাকরির জন্য গেলেও কেউ আমাকে চাকরি দেয় না। আসল পরিচয় পেলে মানুষ যে কেবল কাজ দেয় না তাই-ই নয়, কোনো মেয়েকে বিয়েও দিতে চায় না বাবা-মা। অনেক কষ্টে নিজের পরিচয় গোপন রেখে বছর খানেক আগে একটা বিয়ে করেছিলেন জজ মিয়া। কিন্তু সে সংসার টেকেনি। পরিচয় জানার পরে বিয়ের তিন-চার মাসের মাথাতেই সেই বউয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। জজ মিয়া বলেন, পরিচয় গোপন রেখে অনেক কষ্টে বিয়ে করেছিলাম। কত দিন আর গোপন থাকে বলেন। পরিচয় ও মামলার কথা জানার পরে আমার শ্বশুর বলল, আমার মেয়ে আমি নিয়ে যাব। তখনই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। সবাই মনে করে সরকার পরিবর্তন হলে আমাকে আবার জেলে যেতে হবে।
এখন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় পাঁচ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি টিনশেড বাসায় থাকেন জজ মিয়া। দুই রুমের বাসায় ছোট বোন খোরশেদা (১৯), ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম (১৭) ও অসুস্থ মা জোবাদা খাতুনকে নিয়েই সংসার। ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে যে টাকা আয়, তাতে সংসার চালাতেই টানাটানি। এর ওপর মায়ের চিকিৎসা। বোনকেও বিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কাঁধে। মামলা-মোকদ্দমায় জমি-জিরাত বিক্রি করায় ভাইয়েরাও তার ওপর নাখোশ। এখন সেভাবে সহযোগিতাও করেন না কেউ।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সেই গ্রেনেড হামলায় দলটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চার শতাধিক নেতাকর্মী। জজ মিয়ার প্রত্যাশা- এ ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের যেন বিচার হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনা তো আমার জীবন লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছেই। কিন্তু এতে অনেকেই নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। আমি চাই, এর জন্য যারা দায়ী তাদের যেন বিচার হয়।