পাঁচ লাখ টাকা গরুর সঙ্গে ছাগল ফ্রি!
---
যশোর প্রতিনিধি : গোয়ালঘরের ছাদে বিরামহীন বাতাসের জোগান দিয়ে চলেছে বৈদ্যুতিক পাখা, নিচে কার্পেট বিছানো। মশা মাছির অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে টাঙানো হয়েছে মশারি। প্রতিদিন পাঁচ কেজি খুদের (ভাঙা চাল) ভাত, এক কেজি করে ভুষি, খৈল ও বিচালি আর ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে গরুটিকে। মৌসুমী ফল কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের ফলও খাওয়ানো হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচশ’ টাকা খরচ গরুটির পিছনে। এভাবে হূষ্টপুষ্ট ও সুন্দর হয়ে উঠেছে গরুটি।
ইতোমধ্যে এর দাম উঠেছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। মালিকের নিশানা পাঁচ লাখ টাকা। গরুর ক্রেতাকে ১০ কেজি ওজনের বাড়ির একটি ছাগলও ফ্রি দেওয়া হবে। গরুটির রঙিন পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ। গরুটির মালিক যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খর্দ্দবনগ্রামের মোজাহার বিশ্বাসের ছেলে আলতাফ হোসেন। প্রায় তিন বছর আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায় এঁড়ে (পুরুষ) বাছুরসহ গাভী কিনেছিলেন তিনি। দুই বছরে নাদুসনুদুস বাছুরটি বড় হয়ে ওঠলে বিক্রির উপযোগী করতে শুরু করেন মোটাতাজাকরণের কাজ। ৮-৯ মাস চেষ্টার পর বর্তমানে গরুটির ওজন প্রায় ২০ মণ হয়েছে।
আলতাফ হোসেন এই একটি গরুকে নিয়ে মেতে থাকলেও যশোর সদরের গোপালপুর গ্রামের আলমগীর সিদ্দিক ও টনি মাহমুদ বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। আলমগীরের খামারে ১৪ এবং টনির খামারে ১৮টি গরু রয়েছে। এবারের ঈদে গরু বিক্রি করে আরো বড় খামার করার স্বপ্ন দেখছেন এই দুই খামারি।
শুধু ওই দুই খামারি নয়, যশোর জেলায় এবার কুরবানি উপলক্ষে ১৪ হাজার ৫৩০টি খামারে ৬৮ হাজার ১২৮টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু ৩৫ হাজার ৭৫২টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৩২ হাজার ৩৭৬টি। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, এবারের কুরবানির জেলায় ৫৫ হাজার গরু ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে চাহিদার চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি গরু ও ছাগল রয়েছে। গতবছর জেলায় ১১ হাজার ২১২টি খামারে ৭০ হাজার ২৫৭টি গরু-ছাগল মোটাতাজা করা হয়েছিল।
এদিকে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, আগে বেনাপোলের পুটখালি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় চার হাজার গরু আসত। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও বিজিবি’র কড়াকড়িতে এখন গরু আসছে না। চুরি করে আসলেও তা নগণ্য। এতে আগে যে গরুর দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল, এখন তা লাখ টাকারও বেশি দাঁড়িয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার জানান, আমরা খামারিদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। কেউ যাতে পশুর শরীরে ক্ষতিকারক ইনজেকশন পুশ না করে সেদিকে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। প্রতিটি হাটে আমাদের মেডিক্যাল টিম থাকবে। ভারতীয় গরু না আসলে কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হলে খামারিরা লাভবান হবেন।