ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে চাপ দেন হিলারি
---
নিউজ ডেস্ক : হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের তদন্ত বন্ধ করতে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
হিলারি শুধু ব্যাক্তিগতভাবে নয় পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে লাগিয়ে এ চাপ দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অডিট করার হুমকি দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জয়কে বারবার চাপ দিতে থাকেন যে, ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে জয় তার মাকে রাজি না করালে যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের বিরুদ্ধেও অডিট করা হবে।
মার্কিন সিনেটে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান চার্লস গ্রাসলির এক চিঠি থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
গ্রাসলি এসব তথ্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বৃহস্পতিবার চিঠিটি দিয়েছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অডিটের হুমকি দেয়ায় জন ডানিলোয়েজকে হাজির করতে টিলারসনকে বলেছেন গ্রাসলি। জন ডানিলোয়েজের সঙ্গে এ বিষয়ে কমিটির একজন স্টাফ কথা বলবেন।
চিঠিতে গ্রাসলি উল্লেখ করেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের একজন দাতা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ক্লিনটন এবং তার স্টাফ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের তদন্ত বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ওপর চাপ দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে তার মাকে রাজি করাতে ব্যর্থ হলে জয়ের বিরুদ্ধে আইআরএস অডিট করার হুমকি দেন।
গত ১১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেন যে, ২০১১ সালের মার্চে হিলারি ক্লিনটন তার অফিসে ফোন করে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করার দাবি জানান।
সম্প্রতি এ সংবাদ হয়েছে বলে উল্লেখ করে গ্রেসলি বলেন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ডোনেশন দেয়ার বিনিময়ে ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল হিলারি ক্লিনটনের পররাষ্ট্র দফতর।
চিঠিতে গ্রাসলি বলেন, বিল ক্লিনটন আরকানসাসের গভর্ণর থাকাকালেই হিলারির সঙ্গে ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর থেকে কয়েক দশক ধরে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের প্রচারক ছিলেন ইউনূস।
তাকে ফাউন্ডেশনের অনেক অনুষ্ঠানে প্রচারে অংশ নিতে দেখা গেছে। বিল ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে নোবেল কমিটির কাছে ইউনূসের পক্ষে লবিং করেন এবং ২০০৬ সালে ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
বিভিন্ন প্রতিবেদনের উল্লেখ করে গ্রাসলি বলেন, ইউনূসের বিভিন্ন কোম্পানি ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভকে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে।
ইউনূসের কোম্পানিগুলো ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে ২৫ হাজার ডলার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে। হিলারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর হিলারি ও ইউনূসের মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর হয়।
হিলারি ক্লিনটনের পররাষ্ট্র দফতর জনগণের ট্যাক্সের এক কোটি ৩০ লাখ ডলারের বেশি তহবিল ইউনূসের ব্যবসায় দিয়েছে।
গ্রাসলি তার চিঠিতে আর উল্লেখ করেন যে, কিছু আইনি লংঘন এবং বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশ সরকার ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড অব ডাইরেক্টরের পদ থেকে অপসারণ করে।
ওই সময়ে ইউনূসের সহযোগী- ক্লিনটন ফাউন্ডেশন, হিলারি ক্লিনটন, শেরিল মিলস এবং পররাষ্ট্র দফতরের অন্য স্টাফদের মধ্যে যে ই-মেইল চালাচালি হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, ইউনূসের তদন্তে মধ্যস্থতা করার মিলিত চেষ্টা হয়েছে।
ওই ই-মেইলগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। ই-মেইলগুলোতে দেখা যায়, ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে চাপ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকের আয়োজন করার চেষ্টা করেছেন। গ্রাসলি তার চিঠির সঙ্গে ওই ই-মেইলসমূহ সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
টিলারসনকে লেখা গ্রাসলির চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকবার আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় এটা স্মরণ করেন যে, তার সঙ্গে প্রত্যেক বৈঠকেই ইউনূসের তদন্তের বিষয়টি অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে। তখন তিনি এই তদন্ত বন্ধ করে দেয়ার চাপ অনুভব করেন।
যাদের সঙ্গে জয়ের বৈঠক হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি, ড্যান মজিনা, বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের উপপ্রধান জন ডানিলোয়েজ এবং ইউএসএআইডির প্রশাসক রাজিব শাহ।
গ্রাসলি চিঠিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে তৎকালীন উপ প্রধান জন ডানিলোয়েজের দু’টি আলোচনার কথা উল্লেখ করেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে তার মাকে রাজি করাতে না পারলে জয়ের বিরুদ্ধে আইআরএস অডিট করা হবে।যুগান্তর