স্থুলতা থেকে পরিত্রাণ পেতে চিকিৎসায় সহায়তা চান ২৯৫ কেজি ওজনের মাখন
AmaderBrahmanbaria.COM
মার্চ ২৭, ২০১৭
---
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা, ২৯৫ কেজি ওজনের মাখন মিয়ার (৩৮) ওজন বাড়ছে প্রতিনিয়তই। দীর্ঘ চিকিৎসা করিয়েও ফল পাননি। হাঁটাচলাও তার জন্য বর্তমানে কষ্টসাধ্য হয়ে দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ মৌড়াইলের বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. জামাল খান, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফারুক মিয়া ও আইনজীবী মো. রুবেল খানের সঙ্গে।
তারা কালের কণ্ঠের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি মাখন মিয়া অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেছেন। এখন তার বেঁচে থাকাই দায়। এলাকার সবাই মিলে তার চিকিৎসা করানোর একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে কোনো বিত্তশালী ব্যক্তি যদি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হবে।
মাখন মিয়ার চিকিৎসা সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্য গত সোমবার তার স্ত্রী লুৎফা বেগমের নামে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখায় নতুন হিসাব খোলা হয়েছে, যার নম্বর ০২০০০০৯৬৪২৮২০। মাখন মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বর ০১৭৬০৩১১৯৬১।
কালের কণ্ঠের খবরটিতে বলা হয়েছে- ‘যহন প্রেশারটা একটু লো (নিম্ন রক্তচাপ) অইয়া যায় তখন খালি খিদা লাগে বেশি। সামনে যা পাই তাই খাইতাম ইচ্ছা করে। খাওয়ন শেষ অয় কিন্তু আমার পেডে খিদা থাহে। অত খাওয়ন আমি পামু কই। পেডে খিদা থাকলে আবার শরীর খারাপ লাগে। ‘
কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন মাখন মিয়া। সামনে থাকা অনেকের চোখেই তখন পানি। মাখন মিয়া চুপ রইলেন অনেকক্ষণ। চোখ মুছে বাঁচার আকুতি জানালেন। নিজের চিকিৎসা ও খাওয়া খরচ জোগানোর জন্য সবার সহযোগিতা চাইলেন।
ছোটবেলায় এমন ছিলেন না মাখন মিয়া। ২০-২২ বছর বয়স থেকে তার ওজন বাড়তে থাকে। ওজন কমানের জন্য মাটি কাটার মতো পরিশ্রমের কাজে লাগানো হয় তাকে। কিন্তু ফল আসেনি। এমন তথ্যই দিলেন মাখন মিয়ার বাবা মিলন মিয়া।
গত সোমবার (২০ মার্চ) রাতে মাখন মিয়ার বাড়িতে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত লেখা তিনি সযতেœ রেখেছেন। ওই লেখায় উঠে এসেছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে মিসরের এক নারীর ১০৮ কেজি ওজন কমানোর কথা। ভারতের মুম্বাইয়ে ওই নারীর চিকিৎসা হয়। মাখন মিয়াও চান তাঁর ওজন কমাতে। কিন্তু দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যয় বহনের সামর্থ্য তাঁদের নেই।
মাখন মিয়া জানান, ২০০১ সাল থেকে তিনি মোটা হতে শুরু করেন। তখন ওজন কমানোর জন্য তিনি ভারী কাজ বেছে নেন ও প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতেন। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছিল না। ২০১০ সালের দিকে ওজন ১৫০ কেজি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। ঢাকায় গিয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওষুধ খেয়েছেন। কিন্তু ওজন বেড়েই চলছে।
রুটি খেলে পেটে সমস্যা দেখা দেয়। তাই তিনবেলা ভাত খেতে হয় মাখন মিয়াকে। তাও আবার নরম করে। এ ছাড়া অন্য স্বাভাবিক খাবারও খান সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু বেশি। ভারী শরীরের কারণে এখন তিনি কোনো কাজই করতে পারেন না। এমনকি প্রাকৃতিক কাজ সারা, বিছানা শুয়ে থাকাটাও তার জন্য অনেক কষ্টের। আত্মীয়স্বজনরা মাখন মিয়ার খাবার খরচ জোগানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বহন করছেন।
মাখন মিয়া বিয়ে করেন ২০০৩ সালে। তার বড় ছেলে মো. রাব্বি নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও মেয়ে নাভা সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। চার ভাই, তিন বোনের সংসারে মাখন সবার বড়।
মাখন মিয়ার স্ত্রী লুৎফা বেগম জানান, শরীর অনুযায়ী খুব বেশি খাবার খান না তার স্বামী। খাবারের চাহিদাও খুব বেশি নেই। কিন্তু খাবার কম খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দিন তিনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন। তিনি স্বামীকে বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা চান।