তিস্তা চুক্তি এবারও অনিশ্চিত : পানিসম্পদমন্ত্রী
সাত বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরেও হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কথায়।
শেখ হাসিনার সফরের দুই সপ্তাহ আগে মঙ্গলবার ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছেন, “আমি কোনো সময়সীমা দিতে চাই না। আবার এও বলব না যে, এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে। তবে আমি আশাবাদী।”
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বহু আশ্বাস দেওয়া হলেও তাতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যে আগামী ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওই গোলটেবিল বৈঠকে আনিসুল বলেন, “ভারতের দুইজন প্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন তিস্তা চুক্তি হবে। সম্প্রতি মোদীও তার সফরে বলে গেছেন যে এ চুক্তি হবে।
“তবে যে কোনো দেশেরই একটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে, সে সমস্যাটা আপনারা জানেন। প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, কিন্তু সে সমস্যাটাও আপনাদের মনে রাখতে হবে।”
২০১০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তা আটকে যায়।
এরপর ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালে ঢাকা সফরে এলেও সেই জট খোলেনি। আশ্বাস দিয়েই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি।
তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের আপত্তিকে বাধা হিসেবে দেখিয়ে আসছে। এনিয়ে বিজেপিবিরোধী নেত্রী মমতার সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি।
এবারের সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতাকে একসঙ্গে বসানোর পরিকল্পনা চলছে বলে নয়া দিল্লির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ চুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালানোর আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী আনিসুল বলেন, “আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে সবসময় কথা বলছি। আমরা ভারতকে গঙ্গার প্রবাহ কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছি।”
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “এই চুক্তি আমাদের কোনো ক্রাইসিস থেকে করা হচ্ছে না, বরং সেচের জন্য যেন আমরা পানি ব্যবহার করতে পারি সেজন্য। এটি শুস্ক মৌসুমের জন্য করা হয়নি।
“দেখা যায় স্বল্প সময়ের জন্য খরা হয়, সেসময় পানি দিতে না পারলে ফসলের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। আর সেই ফসলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে কারণেই তিস্তা চুক্তি।”
অনুষ্ঠানে গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে সমালোচনার জবাবও দেন আনিসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “গঙ্গা বাঁধ নিয়ে ভারতের সাথে আমাদের কথা হচ্ছে। ২ দেশের যৌথ কমিটিও কাজ করছে। এ বাঁধ নিয়ে আমরা পুনঃপরীক্ষা করছি, যাতে ভবিষ্যতের সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমরা অবগত হতে পারি।
“গঙ্গা ব্যারেজের দুরত্ব ১৬৪ কিলোমিটার, যার ৮২ কিলোমিটারের দুই পাড় বাংলাদেশের মধ্যেই; বাকি ৮২ কিলোমিটারের একপাড় বাংলাদেশে, অন্যপাড় ভারতে। অর্থাৎ এ বাঁধের যে অংশে আমরা পানি সংরক্ষণ করব তার চারভাগের একভাগ ভারতে। সেজন্য ভারতের সাথে আলোচনা করতে হচ্ছে।”
গঙ্গা বাঁধ না করলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আর্সেনিক সমস্যা, বাস্তুসংস্থান সমস্যা, সুন্দরবনের সমস্যা, লবণাক্ততা সমস্যা বাড়বে বলে দাবি করেন আনিসুল।
‘বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিলে পানি সংরক্ষণের উপর জোর দেন তিনি।
ভূগর্ভ্যস্ত পানির উপর চাপ কমানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, “আমাদের চাহিদার ৭০-৮০ ভাগ পানি আমরা ব্যবহার করছি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। কিন্তু এটি ৫০ ভাগে নামিয়ে আনতে পারলে এক ধরনের ভারসাম্য আসবে। একারণে আমরা উপরিভাগের পানির উপর জোর দিচ্ছি। তাহলে আর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামবে না।”
ভোরের কাগজ, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেল্থ এবং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন কোলাবরেটিভ কাউন্সিল এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর আহমেদ খান, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হুসাইন, বাংলাদেশ ওয়াশ এ্যালায়েন্সের পরিচালক মনিরুল ইসলাম, পল্লী এলাকা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুর রহমান।