টেকনাফে লবণ উৎপাদন: হাসি চাষীর মুখে
নিজস্ব প্রতিবেদক :অনুকূল আবহাওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় পুরোদমে লবণ উৎপাদন ও বিক্রির ধুম পড়েছে। চলতি বছর দুই হাজার ৮শত পঞ্চাশ একর জমিতে লবণ চাষ করছে চাষীরা। তবে এখনো লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর টেকনাফে ৮৮ হাজার ২শত মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নভেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া, হারিয়াখালী, মণ্ডল পাড়া, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নে রঙ্গিখালী, আলীখালী, চৌধুরীপাড়া, দমদমিয়া, জইল্যারদ্বীপ, জাদীমুরার নয়াপাড়া, মুচনী, লেদা, ফুলের ডেইল, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নোয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিলসহ লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই ভরা মৌসুমে লবণ উৎপাদনে চাষীদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। চাষীরা লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় কোমর বেঁধে মাঠে চাষ করে যাচ্ছে। আবহাওয়া লবণ চাষের অনুকূলে থাকলেও উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে চাষীরা দিনরাত খেটে লক্ষ্যমাত্রার অধিক লবণ উৎপাদন করে থাকেন।
কক্সবাজার জেলায় চলতি বছর ৬৪ হাজার ১২৫ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে বলে বিসিক সূত্রে জানা যায়। এরমধ্যে টেকনাফ উপজেলায় দুই হাজার ৮৫০ একর জমিতে লবণ উৎপাদন পুরোদমে চলছে। মাঠে প্রতি ৪০ শতকে ২২০ মণ থেকে সাড়ে ৩০০ মণ লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি মণ লবণের মূল্য ২৮০ টাকা। অথচ টেকনাফের বাজারে খোলা লবণ প্রতি কেজি ২০ টাকা ও প্যাকেট গুঁড়া লবণ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি করছে।
এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সবকিছু অনুকূলে থাকায় অন্য বছরের চেয়ে লবণ উৎপাদন একটু বেশি হবে বলে চাষীরা মনে করছেন। তবে গত বছরের তুলনায় লাভ একটু কম হতে পারে এমনটি মনে করছেন লবণ চাষে জড়িতরা। সাধারণত প্রতিবছর এই সময়ে টেকনাফ উপজেলাজুড়ে লবণ চাষের প্রতিযোগিতা চলে। গেল বছর লবণ চাষীরা অধিক লাভবান হওয়ায় এবারে জমির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জমির মূল্য দ্বিগুণ হলেও বর্গা নিয়ে চাষীরা কিন্তু আগাম লবণ মাঠে নেমে পড়েছেন। লবণের মূল্য থাকায় অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন এলাকায় চাষের জন্য নতুনভাবে জমি আবাদের কাজ চলছে।
টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া এবং মৌলভী পাড়ার বেশ কয়েকজন লবণচাষী বলেন, এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় আগে থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে গত মৌসুমের চেয়ে এবছর আরো বেশি সুবিধা হবে। তবে চাষীরা অভিযোগ করে বলেন, কারণে অকারণে প্রান্তিক লবণ চাষীরা ব্যবসায়ীদের হাতে অনেকটা জিম্মি। কমিশন ভিত্তিতে লবণ মাঠে কাজ করার ফলে অনেকটা মুনাফা বঞ্চিত হতে হয়।
উত্তর আলীখালী এলাকার লবণচাষী মো. কাছিম বলেন, পুরো মৌসুমই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকে চাষীরা। মূল্য বেশি থাকলেও কম ধরে মাঠ থেকে লবণ বিক্রয় করতে হয়। ফলে ন্যায্যমূল্য পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এখন যা মূল্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে লাভ-ক্ষতি সমান সমান।
বিসিকের টেকনাফ ইনচার্জ মিজানুর রহমান মিজান জানান, কক্সবাজার উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার চাষী লবণের আবাদ করেন। এসব চাষী আরো অর্ধ-লক্ষাধিক শ্রমিক লবণ চাষাবাদে নিয়োগ করে থাকেন। তাদের মধ্যে, টেকনাফে দুই হাজার ৫২৫ জন লবণচাষি মাঠে সক্রিয়ভাবে চাষাবাদ করছেন। তাদের রয়েছে আরো অনেক শ্রমিক। ফলে লক্ষাধিক উপকূলীয় বাসিন্দা এ লবণ চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।