চট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহ কম বিদেশিদের
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে ছয় হাজার ৩৩২ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র দুই কোটি টাকা। যা মোট বিনিয়োগের ১ শতাংশেরও অনেক কম। গ্যাস সংকট ও জমির উচ্চমূল্যের কারণে বিদেশিরা চট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অর্থনীতিবিদ মঈনুল ইসলাম এই দুটি কারণ ছাড়াও আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডের জমির বিরোধ মীমাংসা না হওয়াকেও বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা মনে করেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জানুয়ারি মাসে ২০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ২০৬ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৭৯০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করে। এই মাসে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ১০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করে। মার্চে ১৪ প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ৯০২ মিলিয়ন টাকা, এপ্রিলে ৮ প্রতিষ্ঠান ৭৯১ মিলিয়ন টাকা, মে মাসে ৯টি প্রতিষ্ঠান ৮১১ মিলিয়ন টাকা, জুনে ৯টি প্রতিষ্ঠান ছয় হাজার ৩৬৮ মিলিয়ন টাকা, জুলাইয়ে ৭টি প্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ৪২৩ মিলিয়ন টাকা, আগস্টে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ১৮ হাজার ৪৮১ মিলিয়ন টাকা, ওই মাসে বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন ১০ মিলিয়ন টাকা, সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিষ্ঠান ৪৯৮ মিলিয়ন টাকা, অক্টোবরে ১৭টি প্রতিষ্ঠান দুই হাজার ৫২৮ মিলিয়ন টাকা, নভেম্বরে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ১১০১ মিলিয়ন টাকা এবং ডিসেম্বরে ১০টি প্রতিষ্ঠান ২৯৬ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করে।
নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত শিল্প ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান। এতে প্রায় ১৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ১৬০টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে নিবন্ধন করেছে। এছাড়া গত বছর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে জুলাই মাসে। এরপর আগস্ট মাসে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে। এছাড়া বছরের শেষ ছয় মাসে আগের ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি নিবন্ধন হয়েছে। দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারার কারণে দেশি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়াকে দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বিদেশি বিনিয়োগের আকার স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়। যার কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় কয়েক গুণ বেশি। দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে চট্টগ্রামে নির্মিত হতে যাওয়া দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন বিদেশি বিনিয়োগে আশা দেখছেন না তারা। এই ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নের কাজ শেষ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল স্থাপন ও গ্যাস পাইপলাইন সম্প্রসারণের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। দেশে দক্ষ জনশক্তি না থাকা বিনিয়োগের অন্যতম একটি বাধা বলে মনে করেন অনেকে।
অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, মীরসরাই ও আনোয়ারায় যে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে, সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন বাড়ার সম্ভাবনা কম। এই দুটি অঞ্চলের কাজ যে গতিতে চলছে, শেষ হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট অন্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। গ্যাস সংকটের কারণে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিদেশিরা। এছাড়া বর্তমানে জমির দাম এত বেশি যে, বিনিয়োগের একটা বড় অংশ সেখানে চলে যায়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হলে জমির সমস্যা কমবে। তখন বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে।
তিনি বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডের ভূমিবিরোধ ২৫ বছরে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এখনো জমির মিউটেশন শেষ হয়নি। এটি বিদেশে আমাদের দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছে। বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য দিচ্ছে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে ২০০৯ সাল থেকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ। গ্যাস না থাকলে বিনিয়োগকারী কীভাবে তার পণ্য উৎপাদন করবে? তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। এই দুটো কাজ দ্রুত শেষ না হলে চট্টগ্রামে বিনিয়োগের চিত্র বদলাবে না। এছাড়া জমির দাম কমাতে হবে। বিদেশিদের আর্কষণ করতে বিশেষ সুবিধাও দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো জন্য সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।