হাড় নরম হওয়া রোগের লক্ষণ কী?
---
অনলাইন ডেস্ক : অস্টিওম্যালেসিয়ার অর্থ হলো নরম হাড়। এ ক্ষেত্রে মূল কারণ হলো ভিটামিন ‘ডি’-এর স্বল্পতা। ভিটামিন ডি-এর অভাবে খনিজ উপাদান ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস শরীরের হাড় ঠিকমতো গঠন করতে পারে না। আর হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কম থাকলে হাড় নরম হয়। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, বেঁকে যায় এবং ভেঙে যায়।
এটি শুধু বড়দের হয়। শিশদের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটলে তাকে বলে রিকেট। অস্টিওম্যালেসিয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। সচরাচর বেশি ঘটে গর্ভাবস্থায়।
এটি অস্টিওপরোসিসের মতো একই রকম নয়। এ দুটো রোগেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু অস্টিওম্যালেসিয়াতে হাড় শক্ত হয় না।
রোগের কারণ
আপনার হাড় শক্তিশালী হওয়ার জন্য কিছু খনিজ উপাদানের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার শরীর সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায় তাহলে আপনার অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে। বিভিন্ন কারণে এটি ঘটতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো :
পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ না করা
আপনার খাদ্য থেকে ক্যালশিয়াম শোষিত হওয়ার জন্য এই ভিটামিনটি প্রয়োজনীয়। এটি আপনি সূর্যালোক কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য অথবা সাপ্লিমেন্ট থেকে পেতে পারেন। ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে হাড়ের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শরীরে ভিটামিন-ডি প্রবেশ না করলে
গ্যাস্ট্রিক বাইপাস কিংবা পাকস্থলী বা অন্ত্রের অপারেশনে কিছু অংশ কেটে ফেলে দিলে, সিলিয়াক ডিজিজ, লিভার ও কিডনির কিছু অসুখে শরীরের ভিটানি ডি গ্রহণের ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
কিছু খিঁচুনির ওষুধেও এটি ঘটে। আপনার কিডনি ঠিকমতো এসিড নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি হতে পারে। অতিরিক্ত সময়ে আপনার শরীরের তরল ধীরে ধীরে হাড়কে নরম করে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে, বংশগত কারণে অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে।
রোগের উপসর্গ
হাড় নরম হয়ে গেলে যে উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে :
* কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরের হাড় ভেঙে যাওয়া
* ক্লান্তি অনুভব করা
* ব্যথা
* অস্থিসন্ধি শক্ত হওয়া
* বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়া কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া।
* বাহু ও উরুর মাংসপেশি দুর্বল হওয়া।
* অস্টিওম্যালেসিয়ার রোগী হাঁসের মতো হেলে দুলে থপ থপ করে হাঁটতে পারে।
রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ মাত্রা পরিমাপ করা
* হাড়ের কাঠামো দেখার জন্য এক্স-রে করা
* হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য বোন মিনারেল ডেনসিটি স্ক্যান করা।
* ক্ষেত্র বিশেষে বোন বায়োপসি করা
চিকিৎসা
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া হয় তাহলে খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য এবং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে :
* সম্পূর্ণ খাদ্য শস্য বা সিরিয়াল
* পনির
* ডিম
* মাছ
* যকৃত
* দুধ
* কমলার রস
* দই
আপনি সূর্যালোকে বেশি সময় কাটিয়ে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ডি পেতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন, সঠিক সানস্ক্রিন মেখে নিন। অতিরিক্ত রোদে আপনার ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।
আপনার শরীরের ভিটামিন ডি পরিশোষণে সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। আপনাকে বেশি মাত্রায় ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে।
অস্টিওম্যালেসিয়ার কারণে আপনার হাড় ভেঙে গেলে বা বিকলাঙ্গ হলে ব্রেস পরতে হবে। সমস্যা বেশি হলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।