পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন পলক ও তারানা
---
নিউজ ডেস্ক : খুব শিগগিরই ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রী সভায় পরিবর্তনের হাওয়া আসছে। আর এই পরিবর্তনে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। জানা যায়, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা প্রতিমন্ত্রী তারনা হালিম এমপি ও জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি বর্তমান সরকারের গুড বুকে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই সরকারের মন্ত্রী সভায় রদ-বদলে তাদের পূর্ণমন্ত্রীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
দুই জনেরই রয়েছে বর্ণাঢ্য ব্যক্তি জীবন। তারানা হালিম ১৯৬৬ সালে ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ আব্দুল হালিম প্রাথমিক অবস্থায় আয়কর কমিশনার ও পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। তার মাতা মরহুমা আখতার হালিম একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তারানা হালিম দুই পুত্র সন্তানের জননী। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ১৯৮২ সালে আজিমপুর অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক এবং হলিক্রস কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষাতেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ হতে যথাক্রমে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন।
বিভিন্ন পদসমূহ : ১। তিনি একটি নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল ইন্সিটিটিউশনের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ২। তিনি একজন কোম্পানী, পারিবারিক ও দেওয়ানী আইন বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেছেন। ৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে একই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৪। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ‘সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ‘তথ্য মন্ত্রণালয়’ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৬। তিনি ১৪/০৭/২০১৫ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন।
সফল এবং বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বেগম তারানা হালিমের উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক স্বীকৃতি ও পুরস্কার সমূহ : ১। সাংগঠনিক কাজে সেরা অবদানের জন্য তিনি “বঙ্গবন্ধু গোল্ড মেডেল পুরস্কার -২০০৮” এ ভূষিত হয়েছেন। ২। সামাজিক কর্মকান্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সংগঠক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী অ্যাওয়ার্ড -২০০৯। ৩। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার -২০০৬ এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত লাইফ টাইম অ্যচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দ্বারা স্কীকৃত।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান : ১। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিশেষ আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন, জ্যাকসন ভিল, নিউ ওরালিন্স, মন্টানায়, “সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারী” শীর্ষক লিডারশীপ প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন। ২। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত টিম এর সদস্য হিসেবে তিনি লন্ডনের “হাউজ অব লর্ডস” এর সদস্যদের সাথে সংলাপে তিনবার অংশ গ্রহণ করেন ও সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেন। ৩। তিনি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত মিলেনিয়াম ডেভলভমেন্ট গোল – ২০১৫ কনফারেন্স শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের জন্য নির্বাচিত মূল দলের সদস্য ছিলেন। ৪। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে “২০০০ মিলেনিয়াম সেশন” এ অংশগ্রহণ করেন। ৫। জার্মানীর বার্লিনে “নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাঃ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ” বিষয়ক সেমিনারসহ বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত হয়েছেন তিনি। জুনাইদ আহমেদ পলক এর জন্ম ১৭ মে, ১৯৮০ সালে। তিনি একজন বাংলাদেশী আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচিত সরকারের সংসদ সদস্য এবং ডাক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা : জুনাইদ আহমেদ পলক ১৯৮০ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের নাটোর জেলার সিংডা উপজেলার সেরকোল তেলিগ্রাম এ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়েজ উদ্দিন এবং মাযের নাম জামিলা আহমেদ। তিনি ১৯৯৫ সালে সিংড়া দমদমা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৯৭ সালে রাজশাহী ওল্ড ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম,এস,এস এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে এল,এল,বি শেষ করে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। তাঁর স্ত্রীর নাম আরিফা জেসমিন (কনিকা)। এ দম্পতির তিন সন্তান। তারা হলো অপূর্ণ জুনাইদ, অর্জুন জুনাইদ এবং অনির্বান জুনাইদ।
রাজনীতিতে উত্থান : বাবা মরহুম ফয়েজ উদ্দিনের পদানুসরণ করে জুনাইদ আহমেদ বিশ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের একজন সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন। আটাশ বছর বয়সে সিংড়া নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনের সামনে নিজের সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও জুনাইদ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের ঘোষণা দেন এবং পুলিশ তাদের সরাতে পরবর্তিতে লাঠি চার্জ করতে বাধ্য হয়েছিল। এ ঘটনার পর জুনাইদ আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের দুইজন সিনিয়র নেতা দলীয় সভানেত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে বৈঠকে করেন এবং বৈঠক শেষে তিনি জানান দলীয় প্রধান তাঁর সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবেন। এবং এর ফলশ্রুতিতে জুনাইদ আহমেদ পরবর্তিতে বাতিল হওয়া ২২ শে জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ করতে সমর্থ হন।
ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬ : ২০১৬ সালের মার্চে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জুনাইদ আহমেদ পলককে ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬’ হিসেবে মনোনীত করে। ৪০ বছরের কম বয়সী তরুণদের নাম প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সাউথ এশিয়া রিজিয়নে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী পলককে ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফোরামের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করে, তার নেতৃত্ব গুণে পেশাদারী কর্ম সম্পাদন, সমাজের প্রতি অঙ্গীকার এবং আগামীর পৃথিবী রূপায়নে সম্ভাব্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছরই সারা পৃথিবী থেকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে উজ্জ্বলতা ছড়ানো ৪০ বছরের কম বয়সী বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ সম্মাননা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন আগামী জানুয়ারিতে মন্ত্রীসভার রদবদল ও দলের শূন্য পদের ঘোষণা আসবে। সূত্র: আমার সংবাদ