নিজস্ব প্রতিবেদক : গত পাঁচ দিনের টানা ট্রেইলর ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে স্মরণকালের ভয়াবহতম কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছে।৩৬ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ধারণক্ষমতার বন্দর ইয়ার্ডে শুক্রবার পর্যন্ত ৪০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার আটকা পড়ছে।এই পরিস্থিতির মধ্যেই ১ অক্টোবর থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে পণ্যবাহী ও তেলবাহী গাড়ি চলাচল এবং ২ অক্টোবর থেকে প্রাইম মুভার, ট্রেইলর, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্ক লরি, বাস, মিনিবাস, টেম্পো, ট্যাক্সি, হিউম্যান হলারসহ সব ধরনের যান্ত্রিক পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখারও ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এতে চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুর ওপর দিয়ে ৩৩ টনের বেশি ওজনের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং গাড়ির ওজন পরিমাপের নামে হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে গত সোমবার থেকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু করে ট্রেইলর প্রাইম মুভার চালক মালিকরা। ধর্মঘটের ফলে লরি ও প্রাইম মুভারে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কন্টেইনার জট তৈরি হতে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক প্রশাসন মো. জাফর আলম রাইজিংবিডিকে জানান, গত পাঁচ দিনের অচলাবস্থার কারণে বন্দরে ভয়াবহ কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরে খালি ও পণ্যভর্তি কন্টেইনার রাখার সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৩৬,৩৫৯ টিইইউএস। সেক্ষেত্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বন্দরে কন্টেইনার মজুদ ছিল ৪০ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার দিন শেষে তা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে সঙ্কট আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জাফর আলম বলেন, বন্দর কন্টেইনার জট স্বাভাবিক সময়েও থাকে। এর মধ্যে টানা পাঁচ দিনের ধর্মঘটের পর নজিরবিহীন জট তৈরি হয়েছে। ট্রেইলর মালিক-চালকদের লাগাতার ধর্মঘট কর্মসূচির ফলে কন্টেইনার শিপমেন্ট, ডেলিভারি এবং খালাস কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে বন্দর পরিচালক জানান।
এদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হলেও কোনো সমাধান ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ১ অক্টোবর থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে পণ্যবাহী ও তেলবাহী গাড়ি চলাচল এবং ২ অক্টোবর থেকে প্রাইম মুভার, ট্রেইলর, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্ক লরি, বাস, মিনিবাস, টেম্পো, ট্যাক্সি, হিউম্যান হলারসহ সব ধরনের যান্ত্রিক পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখারও ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এতে সঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ট্রেইলর মালিক-চালকদের লাগাতার ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৩ টনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ির ওপর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ শুরু করে সড়ক ও সেতু বিভাগ। টাকা দিতে না পারলে পরিবহন শ্রমিকদের মারধর করছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সমাধান দিতে না পারায় আমরা ধর্মঘট শুরু করি। পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান না হলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী জানান, পাঁচ দিনের ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার যথাসময়ে বন্দরে না পৌঁছানোয় অনেক জাহাজ খালি ফেরত গেছে। এতে মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) এবং শিপিং এজেন্টরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিরূপ প্রভাব ফেলবে।