সাত জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক এ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা ও ধরলা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা-দুর্গত এলাকায় ইতিমধ্যে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, ‘কয়দিন আর ঘড়ত চোকি উচা করি একসাতে থাকি? গরু ছাগল, নাতি-নাতনি, জামাই, শ্বশুর-শাশুড়ি এক ঘড়ত থাকি বাহে? শরম লজ্জার বালাই থাকলো না। এই বানের পানি হামাক ন্যাংটা করি ছাড়লো।’ এই কথাগুলো বলেন তিস্তা নদীর গেন্দুরামচরের বাসিন্দা ছায়তন বিবি। একদিকে বাড়ছে বন্যার পানি, অপরদিকে শুরু হয়েছে গাইবান্ধার তিন নদীর ব্যাপক ভাঙন। অন্যদিকে ত্রাণের জন্য হাহাকার বানভাসি মানুষের। নৌকা দেখলেই বস্তা নিয়ে নদীর তীরে জড়ো হচ্ছেন পানিবন্দি মানুষগুলো। অব্যাহত ভাঙনের কারণে মানুষ ঘরবাড়ি সরানোর সুযোগ পাচ্ছে না। ব্রহ্মপুত্র নদীর গতকাল বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অপরদিকে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করলেও অপর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয়েছে চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, গাইবান্ধা সদরসহ ফুলছড়ি উপজেলার অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গেন্দুরাম। সেখানে ২ শতাধিক পরিবার বাস করে। তাদের অধিকাংশ পরিবারের ঘরে কোথাও কোমর পানি, কোনো বাড়িতে হাঁটুপানি। বন্যার শুরু থেকে গেন্দুরামের ছায়তন বিবির বাড়ি ডুবে আছে কোমর পানিতে। ঘরের চৌকি উঁচু করার সঙ্গে পানিও বাড়ে। কাল থেকে আর চৌকি উঁচু করার উপায় নেই। নৌকাও নেই যে ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবেন। তাই জামাই নাতি নাতনি স্বামী বেটিসহ একটা ঘরের মধ্যে থাকেন। আর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে বাইরে ভেলায় করে যেতে হয় কাশবনে। এই হাল ছায়তন বিবির মতো ২ শতাধিক পরিবারের। প্রায় ১১ দিন হলো গেন্দুরামের কেউ এক ছটাক চালও পায়নি। কেউ যায়নি খোঁজ-খবর নিতে। তাই ছায়তন বিবিরা গ্রামের বাড়িতে পানিতে চৌকি উঁচু করেই মাথা গুজে আছে। তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চলজুড়ে পানি। বাজে ফুলছড়ি, যমুনার বাজার, টেংড়াকান্দি, সৈয়দপুর, বাজে চিথুলিয়া, খাটিয়ামারী, দেলুয়াবাড়ি, বাগবাড়ি, জামিরা, গাবগাছীসহ অন্তত ২৩ চর। চারদিক শুধু থৈ থৈ পানি। ডুবে আছে ঘর। কোনোটার অর্ধেক, কোনোটায় হাঁটুপানি। এর মধ্যেই বাধ্য হয়ে চৌকি উঁচু করে মাথা গুজে থাকা। তার মধ্যে নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়েছেন যমুনা বাজারের মানুষ। মাত্র ২ দিনে দেড়শ ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে নদীতে। ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার সুযোগ হয়নি অনেকের। সে কারণে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে গ্রামবাসী একে অন্যকে সহযোগিতা করছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ইউএনও মাসুদুর রহমান মোল্লা লোকজন নিয়ে যান চরাঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ায় সহযোগিতা করতে। সামান্য ত্রাণ বিতরণ করেন। কিন্তু ত্রাণের অপর্যাপ্ততার কারণে তোপের মুখে পড়তে হয় বাজে ফুলছড়িরচরে। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ৪ উপজেলার ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৫৭টি।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার তিন উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বন্যায়। সোমবার যমুনার পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। শ্রেণি কক্ষে পানি ঢোকায় পাঠদান বন্ধ হয়েছে ৭২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এদিকে দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, জ্বালানি সংকট তীব্র হয়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। সারিয়াকান্দিতে ৩০ মেটন চাল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা ছাড়া অন্য কোথাও ত্রাণ বিতরণ হয়নি। সরজমিনে দেখা গেছে, পানি বন্দি লোকেরা ঘরের মধ্য উঁচু মাচা তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের বাড়িতে বুক পরিমাণ পানি ঢুকেছে তারা যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে কোনোমতে মাথা গুঁজে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. আবু সাঈদ জানান, সোমবার যমুনার পানি ১৭.২৩ সেন্টিমিটার মাপা হয়েছে। পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। বন্যার্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে দাবি তার। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম মো. আবু হেনা বলেন, বন্যায় সারিয়াকান্দি উপজেলার ৫১, সোনাতলা উপজেলার ১৩ এবং ধুনটের ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সাময়িক বন্ধ আছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, সোমবার সকালে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর ডানতীরের বাঁধগুলো মোটামুটি সুরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু নদীর পশ্চিম তীরে ঘূর্ণাবর্তের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এজন্য সিরাজগঞ্জ সদর ও চৌহালী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কিছু অংশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ওয়ালি উদ্দিন জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদরসহ কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুরের অন্তত ২৬টি ইউনিয়নের ৯২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার পরিবারের ১৪ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এতে ৬৬২টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয় নেয়ার জন্য ৬৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বন্যা দুর্গতদের মাঝে ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে যমুনা কাজীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের বেশ কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী ঢেকুরিয়া হাট এখন কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত বিলচতল, ঢেকুরিয়া, পলাশপুর, বদুয়ারপাড়া, নতুন মেঘাই, মল্লিকপাড়া, সুতানারা, ফুলজোড়, দাদবোরা, খিরাইকান্দি গ্রাম। এসব গ্রামের কোনো কোনো ঘরের চালা পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। অধিকাংশ মানুষ তাদের গবাদি পশুর সঙ্গে এক স্থানে কোনো রকমে মাথা গুজে রয়েছে। এসব বানভাসি মানুষের জন্য এখনও কোনো ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হচ্ছে। রোববার রাত থেকে জেলা শহরে পানি উঠতে শুরু করেছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা ১-২ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শহরের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতেও পানি উঠছে। সোমবার সুরমা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা ও ছাতক উপজেলায় পানির স্রোতের কবলে পড়ে ৪ জন মারা গেছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল শহরের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। সরকারি বেসরকারিভাবে জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার চানপুর গ্রাম থেকে বিরেননগর পর্যন্ত পাহাড়ের পাদদেশের বাড়িঘর পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাওর বিলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় হাওর এলাকার মানুষজন খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। পানি দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন জানান, গতরাত থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে আবারো শহর এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ৭ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজানে পাহাড়ি ঢলে ধরলা, নীলকমল, বারোমাসিয়া নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, বীজতলাসহ ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। প্লাবিত হয়েছে প্রায় শতাধিক গ্রাম। অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ধরলার তীরবর্তী সোনাইকাজী রামপ্রসাদ গ্রামের ওয়াপদা বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় ধরলার পানি হু হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বানভাসি মানুষ ও গবাদিপশুর খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, বানভাসি এ সব মানুষের খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করলেও এ পর্যন্ত অধিকাংশের নিকট সরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও জানান, কিছু শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ চাওয়া হয়েছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের পানি বৃদ্ধির ফলে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার ভয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষকরাও স্কুলে ছাত্রছাত্রী না আসায় অলস সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বন্ধ রয়েছে জেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৪২৬টি। এর মধ্যে প্রায় ৯৫টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার রাস্ক প্রকল্পের ৭৫টি আনন্দ স্কুল পানিতে ডুবে গেছে। বড়খলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মঞ্জু তালুকদার জানান, আমার বিদ্যালয়ে পানি খুব বেশি প্রবেশ করায় বন্ধ করে চলে এসেছি। উপজেলার অন্যান্য স্কুলগুলোর অবস্থা খারাপের দিকে যাবে পানি আরো বাড়লে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জে টানাবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ১১টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন-সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধারারগাঁও গ্রামের ভাঙা সেতু পার হতে গিয়ে নিখোঁজ ৫ম শ্রেণির ছাত্র শরাফত আলী, ধর্মপাশা উপজেলার ধারাম হাওরে মাছ ধরতে যাওয়া ননী দাস, ছাতক উপজেলার তৌহিদুজ্জামান ও আবেদ আলী বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও সুরমা নদীতে কিং বার্ড নামে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। জেলার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। জেলার প্রায় দুই শতাধিক হাট-বাজার পানিতে ডুবে গেছে। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার ৫টি নদী, সীমান্তের ছোট-বড় ৪০টি ছড়া দিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলায় গতকাল থেকে ৭টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা, রাস্তাঘাট ও শতাধিক হাট-বাজার অধিক পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে হাওরবেষ্টিত হাজার হাজার অসহায় মানুষ। উপজেলা সীমান্তে পাহাড় ধসের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে চানপুর, টেকেরঘাট, লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও, বাগলী সহ জেলার সীমান্তবর্তী ৩ শতাধিক আদিবাসী পরিবার। এদিকে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাওর পাড়ের ৩০টি স্কুল পানিবন্দি রয়েছে। তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলার দুর্গাপুর সড়ক পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালেদুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮০ হাজার টাকা, ১০ টন চাল বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। আরো এক লাখ টাকার ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে কৃষকের পাটের জাগসহ পুকুর, মৎস্য খামার ও জলাশয়ের কয়েক লাখ টাকার মাছ। বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে খাবার সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। গরু- ছাগল, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে পরিবারের লোকজন আশ্রয় নিয়েছে বাঁধসহ উঁচুস্থানে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাউদপাড়া ইসলামীয়া মাদরাসা ও চরচিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানিবন্দি ও ভাঙনকবলিত মানুষগুলো জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তার দাবি জানান। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, সরকারি ভাবে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা ত্রাণ অফিসে জমা দেয়া হয়েছে।
জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের সবচেয়ে ভাটির জনপদ জামালগঞ্জ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এখন পনিবন্দি রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে ৫টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, হাটবাজার, পাহাড়ি ঢলের পানির কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা না হলেও বন্যার্তরা উঁচু জায়গা ও আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। হাওরবাসী হঠামারা গ্রামের আ. রহিম বলেন, যেদিকে চাই হে দিকেই খালি ফানি আর ফানি, যে হারে ফানি বাড়ছে কোন দিন জানি আমরার গেরামটা ডুইবা যায় হেই চিন্তায় আছি। ঢেউয়ে নিতাছেগি আমরার বাড়িঘর, আমরার কপালই খারাপ, না অইলেকি আমরার ইলাখান দুরদশা থাকতে। আমরার অহন এই গেরাম ঘুইরা ঘুইরা ফেনা (কচুরিপানা) আইন্যা আমরার বাড়িঘর ঠিককরণ লাগতাছে। জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে সাচনা বাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম বলেন, সাচনা বাজার ইউনিয়নের বেশক’টি প্লাবিত গ্রাম ঘুরেছি, উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা আজকালের মধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা বলেন, উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।