উত্তপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ভিডিও)
---
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার দিনভর বিক্ষোভ করেছে মাদ্রাসা ছাত্ররা। এসময় শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙ্গচুর করা হয়। রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলষ্টেশন ব্যাপক ভাঙ্গচুর করা হয়। এতে দিনভর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুও ঘটনায় বুধবার সারাদেশে হরতাল আহবান করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদের মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ২ মাদ্রাসা ছাত্রের বাদানুবাদ হয়। এরজের ধরে মাদ্রাসার কয়েক’শ ছাত্র ঐ মার্কেটে গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন জেলা পরিষদ মার্কেটের মোবাইল দোকানী রনি। এসময় মার্কেটের দুটি দোকান ভাঙ্গচুর করা হয়। এরপরই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাদ্রাসা ছাত্রদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দেয়। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত শহরের কান্দিপাড়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সামনে দু-পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরন ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৫ শতাধিক রাবার বুলেট ও কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহত মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান(২০) রাত ৩ টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সকাল ৭ টা থেকে মাদ্রাসার শতশত ছাত্র-শিক্ষক শহরের প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিভিন্নস্থানে ভাঙ্গচুর চালায়। কোর্ট রোড এলাকায় ব্যাংক এশিয়ার শাখা ভাঙ্গচুর করা হয়। শহরের বিভিন্নস্থানে থাকা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নামে টানানো বিলবোর্ড ছিড়ে ফেলে দেয়া হয়। সকাল ১০ টার দিকে রেলপথে অবরোধ সৃষ্টি করে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় রেলপথের বিভিন্নস্থানে। এসময় রেলষ্টেশনের প্রতিটি কক্ষ ব্যাপক ভাঙ্গচুর করে। ভেঙ্গে ফেলা হয় কন্ট্রোল প্যানেল। ফলে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল,শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে সাহিত্য একাডেমী,তিতাস সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ,শিশু নাট্যম,শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার ব্যাপক ভাঙ্গচুর করা হয়। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা সঙ্গীতাঙ্গনে। আগুন দেয়া হয় হালদারপাড়াস্থ আওয়ামীলীগের অফিসে। বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে ভাঙ্গচুর চালানো হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুলিশের রিকুজিসন করা একটি গাড়ি। এক র্যাব সদস্যকেও মারধোর করা হয়। দিনভর এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন ছিলো অসহায়। সকালে ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করার পর তা বাড়িয়ে ৬ প্লাটুন করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব। কিন্তু উত্তেজনা কমানো যায়নি কোনভাবেই।
নিহত হাফেজ মাসুদুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনিছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তার সহপাঠীদের অভিযোগ সোমবার রাতে পুলিশ তালা ভেঙ্গে মাদ্রাসার প্রবেশ করে ছাত্রদের উপর হামলা করে। এসময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েক জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত হাফেজ মাসুদুর রহমানকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ স্বীকার করেছে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। তবে পুলিশের নির্যাতনে সে মারা যায়নি। সদর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ জানান, তাদের নির্যাতনে কেউ মারা যায়নি। এদিকে সকাল ১০ টায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসায় এক জরুরী বৈঠকে বসে জেলার শীর্ষস্থানীয় আলেমরা কর্মসূচী ঘোষনা করেন। মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহবান করা হয়।