ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ: ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেটের রেল চলাচল বন্ধ,রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন
---
আমিরজাদা চৌদুরী : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আবারও ভাংচুর-সংঘর্ষ হয়েছে, শহরে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
মাদ্রাসা ছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন ভাংচুর করে লাইনের স্লিপার খুলে ফেলায় ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার জেলায় সকাল–সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করছে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা।
মঙ্গলবার ভোরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাফেজ মাসুদুর রহমান (২০) নামের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের ভাদুঘর এলাকার হাফেজ ইলিয়াস মিয়ার ছেলে।
সোমবার রাতে সংঘর্ষের সময় মাসুদকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভোর রাতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাইনুল হক উপল বলেন, “মাসুদের বুকের বাঁ পাশে ও পেটের নিচে বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল।”
মাসুদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকালে মাদ্রাসা শিক্ষার্ধীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কয়েকশ ছাত্র শহরের টিএ রোড, কুমারশীলের মোড়, লোকনাথ ট্যাংকের পাড়সহ কয়েকটি স্থানে রাস্তা আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
এ সময় তারা সড়কের উপর কয়েকটি তোরণও ভাংচুর করে। পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতে সকাল ৮টার দিকে শহরে বিজিবি মোতায়েন করে স্থানীয় প্রশাসন।
এরই মধ্যে বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্ররা রেল স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং স্লিপার খুলে ফেলে।
এ কারণে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী স্টেশন মাস্টার মাইনুল ইসলাম বলেন।
“ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সূবর্ণ ও কালনী এক্সপ্রেস রাস্তায় আটকা পড়েছে।”
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সভাপতি মহিউদ্দন আহমেদ মাসুম বলেন, মাসুদ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল–সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার এএসপি তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, “শহরে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি।”
১২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলাম বলেন, শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এএসপি তাপস রঞ্জন বলেন, আগের দিন বিকালে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র মোবাইল ফোন সেট কেনার জন্য জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমে যান। সেখানে দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে একপর্যায়ে দোকানদার ওই ছাত্রকে চড় মারেন। এ খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসার অর্ধশতাধিক ছাত্র দোকানটিতে ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
সংঘর্ষ চলাকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩০-৩৫টি হাতবোমা ফাটানো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
সোমবারের সংঘর্ষে আহত ২০ জনের মধ্যে পুলিশ সদস্য রাজীব চন্দ্র দাসকে (২৫) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।