নাক দিয়ে হঠাৎ রক্তক্ষরণ, কারণ ও প্রতিকারের উপায়
---
নাক দিয়ে রক্তপড়া একটি সাধারণ সমস্যা। এটা হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে হয় বলে ভয়ের উদ্রেক করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা তেমন কোন মারাত্মক সমস্যা না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে এপিসটেক্সিস বলে। সাধারণত শীতের সময় নোজব্লিড হয়। যেকোন বয়সের মানুষেরই এই সমস্যাটি হতে পারে, তবে ২-১০ বছরের শিশুদের এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৫০-৮০ বছরের মানুষের বেশি হয়। রক্তক্ষরণ কোথা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
নাকের সামনের অংশ থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তাঁকে এন্টেরিওর নোজব্লিড বলে। প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ রক্তক্ষরণ এন্টেরিওর নোজব্লিড ধরণের হয়। এক্ষেত্রে নাকের অগ্রভাগের রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ হয় যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
নাকের পেছনের দিকের ধমনী থেকে যে রক্তক্ষরণ হয় তাঁকে পোস্টেরিওর নোজব্লিড বলে। এই প্রকারের রক্তক্ষরণ জটিল আকার ধারণ করতে পারে যার ফলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের (অটোলে্রিঞ্জোলজিস্ট) শরণাপন্ন হতে হয়।
নোজব্লিডের কারণ
আমরা শ্বাসের মাধ্যমে যে বাতাস গ্রহণ করি তাকে উষ্ণ ও আদ্র রাখাই হচ্ছে নাকের কাজ। নাকের মধ্যে অনেক রক্তনালী থাকে, এরা বেশ ভঙ্গুর হয় এবং এরা উপরিভাগে ও কাছাকাছি থাকে যার ফলে এরা দ্রুত আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করে।
– ঘরের বাতাস শুষ্ক ও উত্তপ্ত হলে নাকের পর্দাও শুষ্ক হয়ে যায় তখন জোরে নাক ঝাড়লে নোসব্লিড হতে পারে
– শ্বাসনালীর ইনফেকশন, সাইনুসাইটিস, হাঁচি ও কাশীর জন্য নোসব্লিড হতে পারে
– অনেক জোড়ে নাক পরিষ্কার করলে
– নাকের ভিতরে কিছু ঢুকলে
– নাকে বা মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হলে
– অ্যালার্জির কারণে
– নাকের প্রদাহের জন্য
– অ্যাসপিরিন, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ঔষধ, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি ঔষধ সেবনের জন্য
– উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে
– নাকের দুই ছিদ্রের মধ্যবর্তী সেপ্টাম বা পর্দার অস্বাভাবিক গঠনের জন্য
– রাসায়নিক যন্ত্রণাদায়ক পদার্থ যেমন- কোকেইন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল ইত্যাদির কারণে
– টিউমারের কারণে
– উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যা খুবই বিরল
প্রতিকারের উপায়
সাধারণ কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে সহজেই নোজব্লিড বন্ধ করা যায়, যেমন-
-শান্ত হয়ে বসুন। মাথাটা উপরের দিকে করে রাখুন
– টিস্যু বা নরম কাপড় দিয়ে রক্ত মুছে নিন
– নাকের নরম অংশকে হাতের আঙ্গুল দিয়ে টিপে ধরুন
– টিপে ধরা অংশ থেকে দৃঢ় ভাবে উপরের দিকে চাপ দিন
– এইসময় মাথা সামান্য সামনের দিকে আনুন। এতে শ্বাস গ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হবে তবে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করবে।
– ৫ মিনিট এভাবে রাখুন। যতক্ষণ না রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে ততক্ষন প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন।
– নোসব্লিডের সময় কখনোই শুবেননা বা মাথা উপুড় করবেননা
– নাকে ও গালে বরফ লাগান।
সতর্কতা :
· মাথা ৩০-৪৫ ডিগ্রী উপরের দিকে রেখে বিশ্রাম নিন
· নাকের ভেতরে কিছু ঢোকাবেন না। মুখ হাঁ করে রাখুন যাতে মুখ দিয়ে বাতাস যাওয়া আশা করতে পারে
· নাক ঝারবেন না
· ভারী কিছু ওঠানোর জন্য ঝুঁকবেন না
· মল ত্যাগের সময় চাপ দেবেন না। কোষ্ঠ কাঠিন্য নিরাময়ের চেষ্টা করুন
· ধূমপান করবেন না
· নরম ও ঠান্ডা খাবার এবং পানীয় খান
· নোজব্লিড হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন গরম তরল খাবার গ্রহণ করবেন না
· ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষধ গ্রহণ করবেন না
· যদি পুনরায় রক্তপাত শুরু হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।