গৃহসাজের সহজ পাঠ
মাইশার নীল একটা বিছানার চাদর পছন্দ হয়ে গেল দোকানে ঘুরতে ঘুরতে। কিন্তু মুশকিল হলো ঘরের পর্দার রং তো হলুদ। আবার কিছুতেই চাদরটা রেখে আসতে ইচ্ছা করছে না। এ রকম সমস্যা অনেকেরই। সোফার কভার, টেবিল ম্যাট-রানার, জানালার পর্দা কিংবা কার্পেট-সব একই নকশা বা মোটিফের মেলানো কষ্টকর। ঘরের সব ফেব্রিকস যে একই রঙের হতে হবে তা কিন্তু নয়। পর্দা আর বিছানার চাদর আলাদা রঙের হলে বিছানার বালিশের কভারে এই দুই রঙের ছোঁয়া রাখুন। আর বেমানান লাগবে না। ম্যাচিং মানেই একটা নির্দিষ্ট রং নয়। গৃহসজ্জায় ম্যাচিং মূলত থিমকে বোঝায়। রং, ম্যাটেরিয়াল, প্রডাক্ট, ফেব্রিকসহ যেকোনো একটা উপাদান গৃহসজ্জার থিম হতে পারে। ধরা যাক, কেউ থিমভিত্তিক বেডরুম সাজাবেন। প্রথমেই তাঁকে পর্দা নিতে হবে। তিনি যদি গোলাপি রঙের পর্দা নেন, তবে শোবার ঘরের অন্য জিনিসপত্রের কভারের রংও একই হবে বা এই রঙের ছোঁয়া থাকবে। আবার হতে পারে কাজনির্ভর। যেমন-পর্দায় যদি অ্যাপ্লিকের কাজ হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য জিনিসেও একই কাজ থাকবে। অর্থাৎ সব কিছুতেই একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে মিল থাকবে। হতে পারে রঙের মিল, উপাদানের মিল অথবা নকশার। আবার পুরো বাড়িতেই যে একটা থিম থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। চাইলে ঘরভেদে থিম বা সাজের পার্থক্য হতে পারে। বসার ঘরে মর্ডান থিম থাকলে দেশীয় সাজের খাবার ঘর হতেই পারে।
গৃহসাজের সহজ পাঠশিশুর ঘরের আসবাবে গাঢ় রং যেমন প্রাধান্য দিতে হবে, তেমনি আসবাব হবে কম উচ্চতার
আলো-ছায়ার রং
ঘরের সাজে বৈচিত্র্য আনতে দেয়ালের রং আর আলোই যথেষ্ট। রঙের সূত্র হলো ছোট ঘরে হালকা উজ্জ্বল রং আর বড় ঘরে গাঢ হালকা দুটোই ব্যবহার করা যাবে। ঘরের কোনো একটা বিশেষ কিছুকে ফোকাস করতে চাইলে সাহায্য নিন রঙের। এক্ষেত্রে ঘরের যেকোনো একটা দেয়ালে গাঢ় রং ব্যবহার করুন। একই রঙ থেকেই হালকা আর গাঢ় শেড বাছাই করুন। এবার এই দেয়ালের মাঝের অংশে পছন্দের জিনিস রাখুন। স্মার্ট টিভি, পছন্দের পেইন্টিং, শোপিস, বই। টিভি রাখতে চাইলে কাঠের প্যানেল করে নিন, শোপিস রাখতে চাইলে দেয়ালের মাঝামাঝি একটা কেবিনেট তৈরি করুন। আরেকটি বিষয়-এই দেয়ালটি অবশ্যই খালি হতে হবে। কোনো ফার্নিচার বা জানালা থাকা চলবে না। এবার আলো। শুধু স্পটলাইট ব্যবহার করে ঘরে মায়াবি আবহ তৈরি করা যায়। স্পটলাইট হচ্ছে এমন আলো, যা পুরো ঘরে না ছড়িয়ে কোনো বিশেষ স্থানকে আলোকিত করে। দেয়ালে, সিলিংয়ে, মেঝেতে এমনকি শোকেসেও ব্যবহার করতে পারেন এই আলো। মোটকথা, যেখানে দৃষ্টি আকর্ষণ সেখানেই স্পটলাইট। স্পট লাইট ছাড়াও ল্যাম্পশেড, হিডেন লাইট বা হ্যাঙ্গিং লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
গৃহসাজের সহজ পাঠ বসার ঘরের সেন্টার টেবিলটি কেবিনেটের আদলে বানানো, যাতে জিনিসপত্রও রাখা যাবে
ঠিকঠাক আসবাব
এবার ঘরের ফার্নিচার প্রসঙ্গ। এখন স্লিম ফিট ফার্নিচারের চল। সব ঘরেরই ফার্নিচার নির্বাচনের আগে ঘরের আকার ও থিম মাথায় রাখুন। থিম নানা রকম হতে পারে-দেশীয়, মডার্ন, ঐতিহ্যবাহী, বিদেশি। যেমন-দেশীয় থিমে ঘর সাজাতে চাইলে ঘরের ফার্নিচার, শোপিস সব কিছুই হবে দেশীয় উপাদানে তৈরি। মডার্ন সাজে সব কিছু একটু আধুনিক আর জমকালো ভাব থাকবে। ঐতিহ্যবাহী সাজে রাখুন দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। বিদেশি সাজে ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে ঘরের সাজে। কেউ অ্যারাবিক থিমে ঘর সাজাতে চাইলে ফার্নিচার ও ঘরের অন্যান্য সাজ সে অনুযায়ী হবে। দেয়ালে ইসলামী পেইন্টিং বা ছবি থাকতে পারে। পর্দা, কার্পেট আর শোপিসও হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একইভাবে জাপানি, রাজস্থানিসহ বিভিন্ন থিমে ঘর সাজাতে পারেন। দরজাকে এখন ঘরের ফার্নিচার হিসেবেই আমল দেওয়া হয়। তাই দরজার নকশা আর রংও ঘরের আসবাবের সঙ্গে মানানসই হওয়া চাই।
গৃহসাজের সহজ পাঠ দেয়াল তাক বানিয়ে শোপিস, গাছ ও ফটোফ্রেম সাজানো যায়
একের ভেতর অনেক
দেয়াল ফার্নিচার বা ওয়াল কেবিনেটের কথা বলছি। অনেক কাজের কাজী এই মাল্টিপারপাস ফার্নিচার। জায়গা বাঁচাতে অতুলনীয়, দেখতেও সুন্দর। চাহিদা আর ঘরের আয়তন বুঝে ঠিক করুন একের ভেতর কয়টি ফার্নিচার সংযোজন করবেন। সাধারণত একটা বড় কেবিনেটেই ওয়ার্ডরোব, আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল জুড়ে দেওয়া যায়। প্রয়োজন অনুসারে পাল্লা ও ড্রয়ার দিন কেবিনেটে। মাঝের একটি পাল্লায় আয়না বসান। আয়না বসানো পাল্লার ভেতর কসমেটিকস ও সাজ-সরঞ্জাম রাখুন। বসে আয়েশ করে সাজার জন্য একটা টুল দিন কেবিনেটের নিচের অংশে। যেটা সাজ শেষে আবার কেবিনেটের ভেতর রাখা যাবে। বাইরে থাকবে না আর জায়গাও নষ্ট করবে না। শোবার ঘরে আনেকেই টিভি রাখেন। সে ক্ষেত্রে কেবিনেটের একটা অংশে টিভি ইউনিট করে ফেলুন। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে কেবিনেটের কর্নারে একটা বুক শেলফও জুড়ে দিতে পারেন। এমনকি কেবিনেটের ভেতরই থাকবে আয়রন টেবিল। সব ফার্নিচার একসঙ্গে চাইলে ঘরের বড় একটা দেয়াল খালি করে নিন। ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত তৈরি করে ফেলুন কেবিনেট।
ঘরের কোন অংশে পার্টিশন চাইলে সেটা করুন কেবিনেট দিয়ে। এখন অধিকাংশ বাড়িতে বসার ও খাবার ঘর একত্রে থাকে। এক্ষেত্রে বসার আর খাবার ঘরের মধ্যে ০কাঠের কেবিনেট তৈরি করে নিন। তাকগুলোতে পছন্দসই শোপিস,ওয়াটার প্লান্ট আর ফটোফ্রেম দিয়ে সাজান।
আরও : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে—ধারণা চিকিৎসকের
গৃহসাজের সহজ পাঠ খাবার ঘরে ডিনার ওয়াগান না করে দেয়াল শোকেস করলে জায়গা বাঁচবে অনেক
সিলিংয়ের সাজগোজ
সিলিংও এখন ঘরের সাজের অংশ। তাই সিলিংয়ে থাকা চাই রুচির ছোঁয়া। গৃহসাজে আলাদা মাত্রা যোগ করতে ব্যবহার করুন ফলস সিলিং। তবে পুরো ঘরের সিলিং নয়, ঘরের হাইলাইটেড অংশে হবে এই ডেকোরেটিভ সিলিং। বসার ঘরের প্রবেশপথ থেকেই শুরু করতে পারেন ফলস সিলিংয়ের অংশ। খাবার ঘরের টেবিলের ওপরের অংশে লাগাতে পারেন ফলস সিলিং। এতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি আলাদা করা যাবে সহজেই। শোবার ঘরে খাটের মাথার অংশের সিলিংকে হাইলাইট করুন। চাইলে দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে রঙিন সিলিং লাগাতে পারেন। দেয়াল ও ফার্নিচারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফলস সিলিংয়ের ডেকোরেশন করুন। ফলস সিলিংকে আরো আকর্ষণীয় করতে বোর্ডের মাঝে মাঝে ব্যবহার করতে পারেন ডেকোরেটিভ গ্লাস বা নকশাদার কাচ, তার ওপর একটি স্পটলাইট। ঘরে আসবে আভিজাত্যের ছোঁয়া। ফলস সিলিং আকর্ষণীয় করে তুলতে আলোকসজ্জার কোনো বিকল্প নেই। ফলস সিলিংয়ের খাঁজে বাহারি লাইট দিয়ে ঘরে গর্জিয়াস লুক আনতে পারেন।
গৃহসাজের সহজ পাঠ খাট-লাগোয়া দেয়াল কেবিনেটে স্পটলাইট দিলে বাড়তি আলোর দরকার হয় না
মানানসই মেঝে
মেঝের সাজে টাইলস জনপ্রিয়। হালকা রঙের টাইলস আদর্শ। অনেক টাইলসে মার্বেল বা গ্রানাইট পাথরের হালকা ডিজাইন থাকে। এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। নতুনত্ব আনতে রাস্টিক টাইলসও ব্যবহার করতে পারেন। ব্যতিক্রম সাজের জন্য বসার ঘরের মেঝেতে টাইলসের মাঝে মাঝে কয়েকটি ডেকোরেটিভ গ্লাস বসিয়ে দিন। একটু গর্জিয়াস চাইলে গ্লাসের নিচে লাইট দিন এবং সিলিংয়েও লাইট ব্যবহার করুন। অনেকেই মেঝে দৃষ্টিনন্দন করতে টেরাকোটা ব্যবহার করতে চান। টেরাকোটার সঙ্গে দেশীয় সাজ মানানসই। মডার্ন সাজে মার্বেল, গ্রানাইট ও রাস্টিক টাইলস ভালো মানায়। সিলিং বা দেয়াল বিশেষ কোনো নকশা দিয়ে ডিজাইন হলে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেঝেতে নকশা করুন।
সবুজে বসবাস
শান্তির পরশ পেতে ঘরে রাখুন ইনডোর প্ল্যান্ট। যেকোনো থিমে ঘরের সব অংশে অনায়াসে মানিয়ে যায় গাছ। সোফার পাশে, ঘরের কোণে আর ডাইনিংয়ের পাশে গাছ রেখে ঘর সাজাতে পারেন। বসার বা খাবার ঘরে বনসাই এনে দেবে ভিন্নতা। যেকোনো একটা ফার্নিচারের ওপর ছোট গ্লাসে পানিসহ লতানো গাছ রাখতে পারেন।
ডাইনিং স্পেসের পাশের বেসিনের দেয়ালে ঝুলন্ত গাছ রাখতে পারেন। বাথরুমের জানালায় রাখতে পারেন মানি প্লান্টস। এক্সেসরিজ রাখার র্যাক আর বেসিনের পাশে খুব ছোট টবে রাখতে পারেন ক্যাকটাস। এমনকি শুধু গাছ দিয়েই ঘরের দুটি অংশের পার্টিশন হতে পারে। খেয়াল রাখুন, গাছে যেন প্রাকৃতিক আলো-বাতাস লাগে। সম্ভব না হলে গাছগুলোকে দু-তিন দিন পরপর বারান্দা বা ছাদে দিনের আলোতে রাখুন।